২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

 

‘যায় দিনই ভালো’

আপডেট: জুন ১, ২০১৮

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত অঞ্চল ফার্মগেট। অফিস খোলার দিন বা সপ্তাহিক ছুটির দিন বলে কিছু নেই, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ে এ অঞ্চলের ফুটপাতে।

ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড সংলগ্ন ওভারব্রিজের ফুটপাত সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে মানুষের ঠাসাঠাসি। এ ফুটপাতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পোশাকের ব্যবসা করছেন কুমিল্লার আলাউদ্দিন। বরাবরের মতো এবারও ঈদের জমজমাট বিক্রির আশায় বাহারি নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম। গত বছর প্রথম ১০ রোজায় যা বিক্রি করেছি, এবার ১৫ রোজা পর্যন্ত তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।’

‘প্রতি বছরই ঈদ আসলে ব্যবসায়ীরা বিক্রি গত বছরের তুলনায় কম- এমন অভিযোগ করেন। এটা কি আপনাদের মুখস্থ কথা’- এমন প্রশ্নে আলাউদ্দিন বলেন, ‘স্যার মনে রাখবেন, যায় দিনই ভালো, আর আসে দিন খারাপ। ব্যবসা নিয়ে মিথ্য কথা বলব ক্যান। আসলেই এবার বিক্রি পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় কম। সব ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।’

 

বিক্রি পরিস্থিতি খারাপ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের কাছে গাড়িতে করে সাহেবরা পোশাক কিনতে আসতেন। এখন গাড়ি নিয়ে কেউ আসেন না। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি আসেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদের আমেজ আগের মতো নেই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। এসব কারণেই বিক্রি দিনদিন কমে যাচ্ছে।’

ফার্মগেটে মেয়েদের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন মো. সাইদুল। তিনি বলেন, গরিব মানুষরাই আমাদের কাছে মার্কেট করতে আসেন। তাই আমরাও তাদের সামর্থ ও পছন্দের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পণ্য আনি। এখানে কাজ করা যে থ্রি-পিস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। একই থ্রি-পিস বড় কোনো মার্কেটে কিনতে গেলে ৮০০ টাকার কমে পাবেন না।

 

ছেলেদের বাহারি টি-শার্ট নিয়ে বসেছেন কামরুল। বলেন, মূলত শিক্ষার্থীরাই আমাদের কাস্টমার। তারা এখান থেকে টি-শার্ট কেনেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ ও ফার্মগেটে কোচিং করতে আসা ছাত্ররা আমাদের কাছ থেকে টি-শার্ট সংগ্রহ করেন, সাধারণ মানুষও কেনেন। সাধারণের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা মাল আনি। ২৫০ থেকে হাজার টাকা দামের টি-শার্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে এ ব্যবসায়ী বলেন, বিক্রি মোটামুটি। তবে গত বছরের তুলনায় কম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মাসের মাঝামাঝি সময় রোজা শুরু হয়েছে। এ কারণে কারও হাতে তেমন টাকা-পয়সা নেই। এখানে যেসব শিক্ষার্থী আসেন তাদের বড় অংশই টিউশনি করেন। সুতরাং তাদের টিউশনির টাকা পেতে ৫-৭ তারিখ লেগে যাবে। আশা করছি তখন বেচাবিক্রি ভালো হবে।

শুধু ফার্মগেট নয় ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বাহারি নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। রাজধানীর যে কয়টি অঞ্চলের ফুটপাতে ঈদকেন্দ্রিক জমজমাট বিকিকিনি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতিঝিল, গুলিস্থান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন অঞ্চল।

 

ফার্মগেটের মতো এসব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এবার ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি কম বলে জানান।

মতিঝিলের ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, গত বছর পাঁচ রোজার পর ১৫ রোজা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে যে বিক্রি হয়েছে এবার ১৫ রোজায় সব মিলিয়ে তার সমান বিক্রি হয়নি। আশা ছিল আজ বিক্রি হবে। কিন্তু সকাল থেকে আকাশের যে অবস্থা তাতে দোকান ঠিক মতো খুলতে পারছি না। ঝাপ তুললেই হুটহাট করে বৃষ্টি চলে আসছে। সকাল থেকে মাত্র (জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত) দুটা শার্ট বিক্রি করেছি।

গুলিস্তানের ব্যবসায়ী মো. সালাম বলেন, ‘ভাই বিক্রির পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। আগের বছরের অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, শেষ ১০ রোজায় ভালো ব্যবসা করব। কারণ আমাদের কাছ থেকে যারা পোশাক কেনেন তাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা রোজার শেষপর্যায়ে এসে কেনাকাটা করেন। অনেকে চাঁদরাতের অপেক্ষায় থাকেন। ভাবেন ওইদিন কম দামে পাওয়া যাবে।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network