২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

 

রাজনীতির একাল-সেকাল : শাহজাহান সাজু

আপডেট: মে ১৪, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 

রাজনীতির সেকাল – একাল (পর্ব – এক)
———————————————————অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু  

 

এক সময় মনে হতো রাজনৈতিক নেতা মানে একজন দরদি মানুষ, যিনি নিজের ভোগবিলাস ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। আপদে বিপদে মানুষের পাশে গিয়ে দাড়ান,নীতি আদর্শের কাছে কোন দিন আত্মসমর্পন করেন না,সকল লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে দেশের সেবা করেন। মানুষ নেতাদেরকে আদর্শের প্রতিক হিসাবে শ্রদ্ধা করে,সম্মান করে। নেতা মানে সকলের শ্রদ্ধার প্রতিক।

এরকম বিশ্বাস থেকে ছোটবেলাতেই রাজনীতির প্রতি আমার প্রচন্ড আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এটা হয় মুলত আমার বাবাকে দেখেই। আমার বাবা বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বঙ্গবন্ধুর একজন অন্ধ ভক্ত ছিলেন আমার বাবা। তিনি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি আমাদের এলাকার বহু লোককে রেলওয়েতে চাকরি দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বাবাকে চাকরি জীবনেও অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। একপর্যায়ে এরশাদ সরকারের সময় গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন। কিন্তু কোনদিন লোভলালসার কাছে নিজের আদর্শকে বিকিয়ে দেননি। আমার বাবাই ছিল আমার রাজনৈতিক আদর্শ। বাবাকে দেখেই রাজনীতির প্রতি এই ভালোবাসা।

স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হই। সেই হিসাবে আমার রাজনৈতিক বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। ছাত্রলীগের তৃণমলের একজন কর্মী থেকে জাতীয় শীর্ষ পর্যায়ের অধষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ এবং মন্ত্রীর পদমর্যাদায় কয়েকজন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও শুভকাঙ্খী রয়েছেন । ছাত্রজীবনে একসাথে থেকেছি,একপ্লেটে খেয়েছি,একই বিছানায় ঘুমিয়েছি এরকমও বন্ধু একাধিক মন্ত্রী আছেন। তাঁরা মন্ত্রী হিসাবে বেশ ভালো করছেন। দেখে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে।
আমাদের সময় আমরা মুজিবাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি। দল ক্ষমতায় যাবে, আমরা নিজের আখের ঘুচাব এরকম চিন্তাই তখন আমাদের মাথায় আসেনি। তখন স্বপ্ন ছিল একটাই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা । বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন একটি শোষণহীন, খুদা,দারিদ্রমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে জীবনের সোনালী দিনগুলো দলের পিছনে ব্যয় করেছি। এসব করতে গিয়ে নিজের সংসারে ঠিকমত সময়ও দিতে পারিনি। মুজিব প্রেমে আসক্ত হয়ে জীবনের স্বাদ আল্লাদ অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছি এই রাজনীতির জন্য। জেলজুলুম নির্যাতন ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। কোনদিন লোভলালসার কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেইনি। শত ঝড়ঝাপ্টা মোকাবিলা করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এগিয়ে চলেছি। বার বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে অলৌকিকভাবে ফিরে এসেছি। এসব কারণে যথাসময়ে সংসারও পাতা হয়নি । জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আজ যখন এসব কথা মনে পড়ে তখন হিসাবের খাতা মিলাতে পারি না।
রাজনীতি মানে তো নিজের ভোগবিলাস নয়। রাজনীতি মানে তো পদ ভাঙিয়ে নিজের আখের গোছানো নয়। আমাদের ছাত্রজীবনে আমরা কি পরিশ্রমইনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় নিজের হাতে পোস্টার লাগিয়েছি। নিজের হাতে চিকা (দেওয়াল লিখন) মেরেছি। এখনকার দিনে তা চিন্তা করা যায়? আমাদের টার্গেট থাকতো ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটিকে দলে ভিড়ানো, যাতে দলের ইমেজ বাড়ে। তাকে শো করে আরো পাঁচজন কর্মী বাগানো যেত। আমাদের টার্গেট থাকতো নবাগত ছাত্রদের দলে ভিড়ানো। তাদের জন্য ভর্তি গাইড,কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে দলে ভিড়ানো। আমি নিজে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি গাইড ও কোচিং সেন্টার তৈরি করে তার আয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে বঙ্গবন্ধুর নামে জমি কিনেছিলাম। এখন কি সেটা চিন্তা করা যায়?

পরবর্তী সংখ্যায় থাকছে —–পর্ব ০২

লেখক: সাধারন সম্পাদক,স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ-স্বাশিপ ও সদস্য সচিব,বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যান ট্রাস্ট।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network