১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

 

করোনা ভাইরাসে বেশী মেধাশুন্য হবে বাংলাদেশ : মুহাম্মাদ আল মামুন

আপডেট: জুলাই ৮, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

করোনা ভাইরাস(কোভিড-১৯) এ সবচেয়ে বেশী মেধাশূন্য হবে বাংলাদেশ 

….মুুুহাম্মাদ আল মামুন

 

♦ করোনা ভাইরাসের এ মহামারীতে সবচেয়ে বেশী মেধাশূন্য হবে বাংলাদেশের। যার প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে সবাই দেখছি। প্রতিদিনই বাড়ছে মেধাশূন্যর তালিকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে তা ১৪ই ডিসেম্বর,১৯৭১এর বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকাকেও পেছনে ফেলে দিতে পারে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারন লক্ষণীয় যা নিন্মরুপ:

১) পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা :পরিবার এবং সমাজ করোনা রোগীকে অভিশাপ হিসেবেই দেখেন। যার ফলে অনেকেই আক্রান্ত হয়েও তা প্রকাশ করছেন না। ফলে যে ভবনে তিনি অবস্থান করছেন তার ভবনের মালিকও তা জানতে পারছেন না আর জেনে থাকলেও তা প্রকাশ করছেন না ,ভবনটি লকডাউন করে দেয়ার ভয়ে এতে করে মালিকপক্ষ বাড়ী ভাড়ার ক্ষেত্রে এক ধরনে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন। যার ফলে পার্শবর্তী ফ্লাটে রোগ ছড়াচ্ছে। যে বাসা থেকে বের হয়নি কখনো সেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাসা থেকেই বিভিন্ন অনলাইন সেবার মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছে। শুধু তাই নয় অতি গোপনীয়তার সহিত তা করা হচ্ছে। যদি অনলাইন সেবার তথ্য পর্যালোচনা করা হয় তাহলে এর প্রকৃত চিত্র হবে ভয়াবহ। উচ্চবিত্তদের বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন ফলে আক্রন্ত হওয়ার পর যে পারিবারিক সহযোগিতা প্রয়োজন তা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যের উপর। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারছে না নিজেদের শপে দিতে হচ্ছ ভাগ্যের উপর। আর এভাবে ঝড়ে পড়ছে জীবন।আর বেড়ে চলছে মেধা শূন্যের তালিকা।

২) তথ্য গোপন: এটা একটা বড় সমস্যা। আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা নিজেরাই একটা বলয় তৈরী করে ফেলছি ।আত্নীয়স্বজনদের বলছি যেনো কাউকে না বলা হয়, সহকর্মীদের বলছি যেনো অফিসে না বলে। তথ্য গোপন করে সন্দেহ দূর করতে ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছি। নানা ধরনের জটিলতা এড়ানোর জন্য এ কাজগুলো করে চলছে একটা শ্রেণীর লোকজন। ফলে সংক্রমন বাড়ছে ভয়াবহ রূপে।

৩)সীমাবদ্ধ জীবনযাপন: আমাদের বেশির ভাগ পরিবারেই উপার্জনক্ষম সদস্য সংখ্যা একজন কিংবা দু’জন। অথচ তাদের ব্যয় নির্বাহ করতে হয় ছয় থেকে সাত জনের। আর বর্তমান অবস্থায় আয় কমে যাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা তাদের জন্য দূরে হয়ে পড়ছে। শধু তাই নয়, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রুমে রাখারমত ব্যবস্থাও নেই বেশির ভাগ পরিবারের। ফলে পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যদের মাঝে।

৪)স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা: স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা এবং সক্ষমতা চিত্র সকলের অজানা নয়। সেবার পরিধি সীমিত হওয়ার ফলে সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পাওয়া অনেকাংশেই দুষ্কর। এতে করে জীবনের ঝুকি দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে মেধাশূন্যর তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।

৫)দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন: করোনা’র এ প্রাদূর্ভাবেও এক শ্রেনীর মানুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে। পরীক্ষা না করেও ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে, ফলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, সাধারন মানুষ প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভুল রিপোর্ট এর করনে সংক্রমনের হার বাড়ছে।প্রকৃত রোগী সঠিক তথ্য না জানার কারনে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে।

৬) ধর্মীয় গুড়ামী: সর্ব বৃহৎ মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধর্মীয় গুড়ামী এখানে বিদ্যমান। অনেকে এভাবে বলে থাকেন – মৃত্যু লেখা থাকলে হবেই, এত কিছু মেনে চলে লাভ কি? অথচ কুরআন এবং হাদিসে মহামারীর সময় মুমিন বান্দার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়, এব্যাপারে অনেকেই উদাসীন। প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন গুলো পালন করার ক্ষেত্রেও এক ধরনের অনীহা কিংবা গুড়ামী। একই ভাবে ধর্মীয় আলেম সমাজ মানুষকে পুরোপুরি ভাবে তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন । ফলে সংক্রমনের হার বাড়ছে এবং সাথে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা।

৭)জীবণ ও জীবিকার তাগিদ : মানুষ গুলোকে প্রতিদিনই জীবিকার তাগিদে ঘর হতে বের হতে হয়। ফলে গণ সমাগম বেড়েই চলছে। এতে বুঝার উপায় নেই কে করোনা ভাইরাস বহন করছে কে করছে না। এতে করে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই অন্যের সংস্পর্শে এসে যাচ্ছে।শ্রমজীবী মানুষদের এ স্রোত সামাল দেয়াও আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের সরকারের সামর্থের বাইরে। ফলে বাড়ছে আক্রান্তদের সংখ্যা।আর যারা এ প্রতিযোগিতা মূলক শ্রমবাজারে টিকে থাকতে পারছে না তারা শহর ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে গ্রামে। এতে করে সংক্রমণ শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে।

৮)ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা: আমাদের দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারের ১১৫০ জনের বেশি লোক বসবাস করে আর ঢাকা শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারের ৪৫০০০ জনের উপরে লোক বসবাস করে। জনসংখ্যার বিচারে স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ সুবিধা খুবই কম। ফলে গণবসতির কারনে সংক্রমনের হার বাড়ছে প্রতিদিন।

৯)স্বাস্থ্য বিধি ও আইন না মানার প্রবণতা: মানুষের মাঝে সরকার কতৃক স্বাস্থ্য বিধি মানার প্রবনতা অনেকাংশেই কম। নিজে নিরাপদ থাকি অন্যকেউ নিরাপদ রাখি এ কথা মানতে যেনো নারাজ। কেউ কেউ মাক্স ছাড়াই চলাচল করছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শপিংমল, গনপরিবহন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মানুষের বেপরোয়া চলাচল। সরকারের নেয়া এত এত সচেতনমূলক উদ্যোগ যেনো ব্যর্থ হতে চলেছে। দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এ জাতি যেনো ভুলে গেছে। এতে করে বাড়ছে রোগী ও মৃত্যু’র সংখ্যা।

১০) ঋতু বৈচিত্র্য : ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। একদিকে করোনা ভাইরাস আবার অন্য দিকে বন্যা । বন্যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে বন্যা কবলিত এলাকার কেউ করোনা আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নিয়ে আসা খুব কঠিন। ফলে এক ধরনের উভয় সংকটে বন্য কবলিত এলাকার লোকজন ।এদেশের মত ঋতু বৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। তাই একদিকে যেমন করোনা আর অন্য দিকে ডেঙ্গু ও বন্যার প্রাদুর্ভাব। ফলে এ সময়ে মৃত্যু ঝুকি চরম আকারে বাড়ছে।

তাই পরিশেষে বলা যায় যদি আগামী নভেম্বর, ২০২০ইং তারিখের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় , তাহলে শীতকালে মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কেননা সে সময় এমনিতেই সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেশী দেখা দেয়। আর এতে করে সব চেয়ে বেশী মেধাশূন্য হয়ে যেতেপারে এ দেশ ও জাতি। কেননা এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হার আমাদের দেশে তরুণদেরই বশী। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ডাক্তার,ব্যাংকার, উর্ধতন প্রসাশনিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, তরুণ মেধাবী ও আরো অনেকেই। এভাবে চলতে থাকলে তা অতিক্রম করে যেতে পারে ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ইং এর বুদ্ধিজীবী হত্যার সংখ্যার চেয়েও বেশী। ♦

লেখক : মুহাম্মাদ আল মামুন
কথাসাহিত্যিক ,কবি ও ব্যাংকার।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network