২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

 

তবুও যুক্তরাষ্ট্রে অন্যরকম খুশির ঈদ

আপডেট: মে ২৫, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ ডেস্ক : মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ হয়নি। প্রবাসী বাংলাদেশি এবং মুসলিম কমিউনিটি নিজেদের ঘরেই ঈদের নামাজ পড়েছেন। নামাজের আগে খুৎবা প্রচার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

রমজানের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্থানীয় সময় রবিবার এভাবেই নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিদের বসবাস। চারদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক, অনেক পরিবারে স্বজন হারানোর বেদনা, অনেকে কাজ হারিয়ে হয়ে বেকার, এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর ঈদ উদযাপিত হয়েছে। একেবারে অপ্রত্যাশিত ও ভিন্ন আঙ্গিকে।

প্রতি বছর ঈদে খোলা মাঠে সবচেয়ে বড়ো ঈদের জামাত হতো জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে। করোনা ভাইরাসে লকডাউন থাকায় নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাত্র ১০ জনের উপস্থিতির অনুমতি দিয়েছে। এ সুযোগে বিভিন্ন মসজিদে ক্ষুদ্র পরিসরে ঈদের নামাজ আদায়ের খবর পাওয়া গেছে।

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার স্থানীয় টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খুৎবা প্রচার করে। এতে নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার ডারমট শিয়া মুসল্লিদের উদ্দেশে ঈদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ঈদের জামাতের আয়োজন না থাকায় ঘরে ঘরে নামাজ আদায়ের জন্য ধর্মীয় সহনশীলতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।

যুক্তরাষ্ট্রে তবুও অন্যরকম খুশির ঈদ

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খুৎবা পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও ইমাম শামসি আলী। বয়ানে অংশ নেন হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম এবং দোয়া ও মোনাজাত করেন মুসলিম সেন্টারের খতিব মীর্জা আবু জাফর বেগ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুসলিম সেন্টারের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদি সেন্টার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঈদের নামাজের খুৎবা প্রচার করা হয়। খুৎবা পাঠ করেন সেন্টারের পরিচালক ইমাম কাজী কায়্যুম। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের বিভিন্ন মসজিদে ১০ জনকে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের খবর পাওয়া গেছে। নিউইয়র্কের কয়েকটি মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাধিক ঈদের জামাত হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায় ও ঈদের দিন কেটেছে ঘরে বসেই।

অন্যদিকে নিউইয়র্কের বাইরের কিছু রাজ্যেও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব রাজ্যের অনেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

ঈদে ঘরবন্দি থাকলেও চিরায়ত নিয়মে খাওয়া-দাওয়ার কোনো কমতি ছিল না প্রবাসে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কমবেশি ঈদের রান্না হয়েছে। বিশেষ করে সেমাই ঈদে সবারই খুব প্রিয়।

নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিগত বছরগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রে ঈদের আনন্দ প্রতিফলিত হচ্ছে না বললেই চলে। ঈদের আগে চাঁদরাতে নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি এলাকাগুলোতে ঢল নামতো। ঈদের দিনে ছোট্ট একটা বাংলাদেশে পরিণত হতো অনেক এলাকা, সেখানে ঈদের দিনে সবটা জুড়েই ছিল কেবল নীরবতা। তারপরও সবাই ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করেছেন খুশির ঈদ।

এদিকে মুসলমানদের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা ও আরাধনা মানব জাতিকে করোনাভাইরাস সংকট থেকে উত্তরণে শক্তি জোগাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, মুসলমানরা ঈদুল-ফিতর উদযাপন করছেন। আমরা আশা করি, প্রার্থনা ও আরাধনা দিয়ে তারা করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার শক্তি পাবে।

উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তে দিশাহারা যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই মৃত্যু ১ লাখ ছাড়িয়েছে। নিউইয়র্কেই মারা গেছেন প্রায় ৩০ হাজার। বাংলাদেশি মারা গেছেন আড়াই শতাধিক। ফলে এ বছর ঈদ পরিপূর্ণ আনন্দময় না হলেও অন্যরকম খুশির ঈদ উদযাপন করেছেন প্রবাসীরা।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network