২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

 

টাঙ্গাইলে কলেজ ছাত্র আশিকের মৃত্যু ও কথিত ভালেবাসা

আপডেট: মে ১৩, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 

টাঙ্গাইলে কলেজ ছাত্র আশিকের মৃত্যু ও কথিত ভালোবাসা

অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন তুহিন : দি নেক্সট নিউজের অনলাইন পোর্টালের একটি সংবাদ পড়ে সত্যি মর্মাহত হয়েছি। নেক্সটনিউজের টাঙ্গাইলের প্রতিবেদক সংবাদটি পরিবেশন করেছেন। সংবাদের শিরোনাম ছিলো ” টাঙ্গাইলে প্রেমের বলি আশিক। ” সংবাদটি টাঙ্গাইল শহরের কাগমারা গ্রামের।সংবাদ থেকে জানা যায়, আশিক টাঙ্গাইল পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র।তার বাড়ির পার্শ্বের জনৈক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তার।মেয়েটার সাথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করার জন্য নিজের টাকায় একটি মোবাইল সেট কিনে দেয় আশিক।কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন মেয়েটির ভাই বিষয়টি জেনে যায়। ঘটনাটি জানার পর মেয়ের ভাই কৌশলে আশিককে ডেকে নেয়। তারপর থেকেই আশিক নিখোঁজ হয়।৩০ এপ্রিল নিখোঁজ আশিক উদ্ধার হয় ৫ মে লৌহজং নদী থেকে। মেয়েটাকে ভালোবাসার বলি হতে হলো কলেজ ছাত্র আশিককে। এমনটাই মনে করছে তার পরিবার ও স্থানীয়রা।আশিকের বাবা পুলিশ অফিসার।তার নাম রাশেদুল ইসলাম।

ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা।বাবা-মায়ের অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো আশিককে ঘিরে।তাদের সকল স্বপ্ন ভেঙে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। মায়ের কান্না যেনো থামছেই না। কিন্তু এই মৃত্যুর দায় নেবে কে? 

থানা পুলিশ ঘটনা তদন্ত করবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করবে।বিচার হবে।রায়ও হবে।বিচারক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবেন। কিন্তু তথাকথিত প্রেম নামক মহামারী থেকে আমাদের মুক্তি আসবে কিভাবে?
শুধু একজন আশিকের মৃত্যুই শেষ মৃত্যু নয়? দেশে কথিত প্রেমের নামে অসংখ্য তরুন-তরুনীর মৃত্যু হচ্ছে। প্রেমের কারনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। হত্যা ও অপহরণের মত ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।প্রেমের কারনে অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী ঝরে পড়ছে। পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কের অবনতি তো ঘটছেই।
বর্তমানে তথাকথিত প্রেমের অজুহাতে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে তরুন প্রজন্ম। প্রেমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ফলে কমসংখ্যকই বিয়ে পর্যন্ত গড়াচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা পর্যন্ত হচ্ছে। আদালতে ধর্ষন মামলার অধিকাংশই প্রেমসম্পর্কিত ঘটনা।প্রেমের নামে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক করার পর বিয়ে না করায় আদালতে বা থানায় ধর্ষনের মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে।আবার অনেকে ইজ্জতের ভয়ে নিরবে সয়ে যাচ্ছে।প্রেমের কারনে শান্তিপূর্ণভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা খুব কমই চোখে পড়ে। দেখা যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও আজ প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছে বুঝে না বুঝে। তরুন-তরুনীরা পরিবারকে উপেক্ষা করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছে । শেষমেশ ফলাফল দাঁড়াচ্ছে কি?

থানা পুলিশ ঘটনা তদন্ত করবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করবে।বিচার হবে।রায়ও হবে।বিচারক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবেন। কিন্তু তথাকথিত প্রেম নামক মহামারী থেকে আমাদের মুক্তি আসবে কিভাবে?
শুধু একজন আশিকের মৃত্যুই শেষ মৃত্যু নয়? দেশে কথিত প্রেমের নামে অসংখ্য তরুন-তরুনীর মৃত্যু হচ্ছে। প্রেমের কারনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। হত্যা ও অপহরণের মত ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।প্রেমের কারনে অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী ঝরে পড়ছে

ইদানীং ঢাকাসহ সারাদেশে বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম ঘটিত ঘটনা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ।পারিবারিক বন্ধনও কমে যাচ্ছে। বিবাহিত নারী-পুরুষের প্রেম-লীলাকে পরকিয়া বলা হচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় পরকীয়ার বলি স্বামী,স্ত্রী-সন্তান। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ-দ্বন্ধ বেড়েই চলেছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি।
কিন্তু এসবের জন্য দায়ী করবো কাকে?
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা,রাষ্ট্র, পরিবার নাকি আকাশ সংস্কৃতি?
এমন এক সময় ছিলো যখন একটি প্রেমের ঘটনা সারা উপজেলা বা জেলায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিতো।আর এখন বিয়ের দাবীতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন,তরুনের হাত ধরে তরুনী উধাও এসব ঘটনা আর আগের মতো আলোড়ন সৃষ্টি করে না।বরং মেয়ের জামাইয়ের হাত ধরে শ্বাশুড়ি উধাও,ছাত্রের হাত ধরে শিক্ষিকা উধাও, ভাতিজার হাত ধরে চাচী, ভাগিনার হাত ধরে মামী উধাও হওয়ার ঘটনাও খুব একটা মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেয় না।পিতা কর্তৃক নিজ কন্যাকে ধর্ষন করার খবরও আমাদের শুনতে হচ্ছে।শিশু ধর্ষনের ঘটনা তো প্রায়শ্বই ঘটছে।
এসবই যেনো আমাদের গাঁ সওয়া হয়ে গেছে।
এসব ঘটনা-দুর্ঘটনার কারনে পরিবার,সমাজে বিশ্বাস ও আস্থার সংকট দিনদিন প্রকট আকার ধারন করছে।
টাঙ্গাইলের আশিকের মৃত্যুও তথাকথিত প্রেমের ফসল। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কেনো যেনো এসবের কোনো বাধাঁ নিষেধ নেই।পাড়া-মহল্লায়, পরিবার-সমাজ এমনকি রাষ্ট্রেও এসবের প্রতি নিরব আচরণ করছে।তাহলে কি আমাদের আশিকরা এভাবেই নি:শেষ হতে থাকবে? আশিকের মতো মায়েদের সাড়ি কি শুধু বাড়তেই থাকবে?

লেখক : একটি বেসরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ও দি নেক্সটনিউজ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।  

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network