২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

 

বরিশালের মুলাদীতে শোক দিবসের আলোচনায় হট্টগোল।। বক্তব্যে বাধা

আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক,বরিশাল : মুলাদীতে জাতীয় শোক দিবসে উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে হট্টগোল, ধ্বস্তাধস্তি ও শোক প্রকাশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ হট্টগোল হয়। প্রশাসনের অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নিয়ন্ত্রণ করায় বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতিকে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি করেছেন বলে দাবী করেছেন প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন সুমন রাড়ী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হট্টগোল হওয়ায় প্রশাসনিক দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, ১৫ই আগস্টের শোক দিবসের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্পন শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আরিফ খান অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেও নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের নির্ধারিত কোনো বক্তা ছাড়া কেউ বক্তব্য দিতে পারেনি।
মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন সুমন রাড়ী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সংবাদকর্মীদের পক্ষে একজনকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজি হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তারিকুল হাসান খান মিঠু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহমেদ জুয়েল আপত্তি জানায়। তারা আপত্তি জানিয়েও ক্ষান্ত হননি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে হট্টগোলের সৃষ্টি করেন। সংবাদকর্মীদের বক্তব্যের সুযোগ দিলে তারা (আ’লীগ ও ছাত্রলীগ) অনুষ্ঠান বর্জন করবেন বলেও ঘোষণা দেন। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতিকে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন।
এ ব্যাপারে মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন সুমন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে শোকানুভুতি প্রকাশ করতে চেয়েছি। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এতে বাধা দেয়। আমি ও সংবাদকর্মীরা এতে বিব্রত হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মূলাদী থানার ওসি মাসুদুর রহমান নেক্সটনিউজকে বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক। সাংবাদিক সুমনের সাথে এ রকম আচরণ না করলেও চলতো।

এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তারিকুল হাসান খান মিঠু নেক্সটনিউজের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ” তাকে (সুমনকে) তো বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে । তিনি বলেন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর মোহাম্মদ হোসাইনী বলেন ” অনুষ্ঠানকে ঘিরে সামান্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিলো। যেহেতু সরকারী অনুষ্ঠান। তাই আমি সাংবাদিক সুমনকে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আব্দুল বারী বলেন, সরকারী প্রোগ্রামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের এহেন আচরণ করা মোটেই ঠিক হয়নি। আমি অনুষ্ঠানে ছিলাম না। আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে ঘটনার ব্যাপারে ইউএনও সাহেবের কাছে জবাব চাইতাম। ”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও অনুষ্ঠান মঞ্চের অতিথি কাজী মাঈনুল আহসান সবুজ নেক্সটনিউজকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ” বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহমেদ জুয়েল ও পৌর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুয়েল প্রেসক্লাবের সভাপতি সুমনের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।ইউএনও ও ওসির সামনে তারা সুমনকে মঞ্চে বক্তব্য দিতে বাধা প্রদান করেছে। সরকারী অনুষ্ঠানে এহেন অরাজনৈতিক আচরণ গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। উপজেলা চেয়ারম্যান ছাত্রলীগ নেতাকে না থামিয়ে উল্টো সাংবাদিক নেতা সুমনকে তুই-তোকারী করে গালমন্দ করেছেন। ”
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদে মধ্যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শোক দিবসের ভাবমূর্তিও অনেকটা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য, মূলাদী উপজেলা সদরের প্রভাবশালী রাঁড়ী বংশের কৃতি সন্তান উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক আলমগীর হোসেন সুমন রাড়ী আওয়ামী লীগের গত উপজেলা সম্মেলনে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেখান থেকে সুমনের সাথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু খানের বিরোধ চলে আসছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network