২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

 

নওগাঁতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষে আগ্রহ বাড়ছে

আপডেট: জুলাই ২০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ থেকে : অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন বিদেশি ফল ড্রাগন। এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার একটি জনপ্রিয় ফল। এই ফলটি পাকার পর অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। ফলটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি একটি ভেষজগুণ সম্পন্ন ফল।

ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাণ্ড থেকে হয়। এই গাছের কাণ্ড কেটে লাগালে তা থেকে গাছ হয়। এটি চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো রাসায়রিক সার ও ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এই ফল চাষের জন্য শুধু জৈব সারই প্রয়োজন হয়।

বর্তমানে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন বাগানে উৎপাদন হচ্ছে এই বিদেশি ফল ড্রাগনের।  কম খরচ, স্বল্প জায়গায় উৎপাদন এবং বেশি দামে এই ফল বিক্রি করা যায়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে দিন দিন এই বিদেশি ফল চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

জানা গেছে, একটি ড্রাগন ফলের গাছ ২৫ থেকে ৩০বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বছরে ৬ মাস ফল দেয়।  সাধারণত মে মাসে গাছে ফুল আসে আর ফুল আসার এক মাসের মধ্যেই তা খাওয়ার উপযোগী হয়।  এই ফল বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের রঞ্জনিয়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. নাইস জানান, লেখাপড়া শেষ করেছি কয়েক বছর আগে। আমার সংসারের অবস্থা খুব ভাল ছিলনা। তাই চাকরির পিছনে না ছুটে চেয়েছিলাম, অন্য কাউকে চাকরি যেন দেওয়া যায়। বর্তমানে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান তৈরি করেছি আমি। ড্রাগন চাষ করে আমি বর্তমানে অনেক লাভবান হয়েছি। অনেকেই আজ আমার বাগানে কাজ করে তাঁদের সংসার চালাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশে ড্রাগন ফলের বাজার এখনোও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে সরকার যদি এই ফলটি বিদেশে রপ্তানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে আগামীতে ড্রাগন ফল চাষীরা আরও অনেক লাভবান হবেন।

উপজেলার একডালা ইউনিয়নের গুয়াতা গ্রামের উদ্যানতত্ত্ববিদ গোলাম রব্বানী জানান, প্রায় চার বছর আগে নিজ উদ্যোগেই তৈরি করেছিলেন ড্রাগন ফলের বাগান। এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফল।  আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করার সুবাদে অনেক লোককে এই লাভজনক ফলের বাগান করার জন্য উৎসাহিত করেছি। তারা এখন এই ড্রাগন ফলের বাগানকে অনেক প্রসারিত করেছেন।

এমনকি, নিজ এলাকায় এই ড্রাগন ফল কিভাবে চাষ করতে হয় তা জানানোর জন্য, আমি নিজ উদ্যোগে বাড়িতে তৈরি করেছি এই ফলের বাগান।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় দিন দিন ড্রাগন চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার ৪.৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। উদ্বুদ্ধ কৃষকদের কৃষি অফিস ড্রাগনের চারা থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে।

এই ফসলগুলো চাষ করলে একদিকে কৃষকরা যেমন কম খরচে ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করতে পারেন অপরদিকে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। উপজেলার অনেক তরুনরা পড়ালেখার পাশাপাশি বর্তমানে এই লাভজনক ড্রাগন ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম জানান, গত ২০১২ সাল থেকে উপজেলাতে ড্রাগন ফল চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার কৃষকদের কাছে একটি লাভজনক ফলের নাম এখন ড্রাগন। কৃষকরা প্রতিদিনই  ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে আসছেন কৃষি অফিসে।

এই কৃষিবিদ আরও বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের চারা সরবরাহ থেকে শুরু করে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, বাগান মালিকদের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network