২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

 

নওগাঁয় কোরবানি পশুর দাম নিয়ে শঙ্কায় ৩১ হাজার খামারী

আপডেট: জুলাই ৮, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ থেকে: ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ঈদ। এরমধ্যে ঈদুল আজহা মূলত কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত। তবে ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে, নওগাঁর পশু খামারীদের দুশ্চিন্তা ততই যেন বাড়ছে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রকোপ কমছেনা। বরং বাংলাদেশে দিন দিন এই রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। করোনার কারনে পশুর হাট বসবে কিনা? হাট বসলেও ক্রেতা মিলবেন কিনা? ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাওয়া যাবে কিনা? এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে খামারীদের মধ্যে। ফলে লোকশান আতঙ্কে রয়েছেন এই জেলার ৩১ হাজার খামারীরা।

জানা গেছে, নওগাঁয় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলায় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার গবাদি পশু মোটা-তাজাকরণ করা হয়েছে। আর এই কাজের সাথে জড়িয়ে আছে জেলার প্রায় ৩১ হাজার খামারীরা। প্রতিবছর রোজার ঈদের পরপরই কোরবানির জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু ক্রয় করে নিয়ে যান। তবে এবারের চিত্রটা উল্টো। করোনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি খামারীদের সাথে। ফলে শুধু কাঙ্খিত দাম নয়, বরং লোকশানের শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

নওগাঁর বেশ কয়েকজন খামারীরা জানান, মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা সারা বছর গরু, ছাগল লালন-পালনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। করোনায় এবছর পশু গুলো সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মোখিন হবেন তাঁরা। এবার করোনার কারনে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পরেছেন এই জেলার খামারীরা।

নওগাঁর দুবলহাটি গ্রামের খামারী বেনজির আহম্মেদ পলাশ এবারে কোরবানীকে সামনের রেখে ২৫টি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।  তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করণের সাথে যুক্ত রয়েছেন।  অন্যান্য বছর রোজার ঈদের পরেই দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা তার খামার থেকে গরু নিয়ে যান। কিন্তু এবছর করোনার কারনে তার সাথে যোগাযোগ করেনি কেউ। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেছেন এই খামারী।

একই গ্রামের আরেক খামারী রবিউল ইসলাম বাবুল বলেন, করোনায় মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।  এজন্য, বাজারে ক্রেতা মিলবে কিনা-সেটিই বড় কথা। আবার ক্রেতা থাকলেও পশুর সঠিক দাম পাবেন কিনা- তা নিয়েও শঙ্কায় পরেছেন তিনি।

সদরের মাতাসাগর গ্রামের খামারী আব্দুল মজিদ এবছর কুরবানীর জন্য লালন-পালন করা ২৭টি গরু নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। কোরবানি ঈদের আগে যেখানে ব্যাপারী এসব খামারে দরদাম হাকতো সেখানে এবার তাঁদের নেই কোন আনাগোনা। আর তাই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা যেন আমাদের কাঁটছেই না।

তিনি আরও জানান, সারা বছর গরু লালন-পালন করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। একদিকে গো-খাদ্যর চড়া দাম, তার উপর করোনায় মন্দা বাজার। এপর্যায়ে লাভতো দূরের কথা, খরচই উঠবে কিনা- তা নিয়ে চরম হতাশায় পরেছি।

জেলা প্রাণি সম্পদের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডা. মো. হেলাল উদ্দীন খান বলেন, এবছর ২ লাখ ৭২ হাজার ৫৩টি কোরবানীর পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হবে। তবে, করোনা পরিস্থিতিতে খামারীদের মাঝে কিছুটা হলেও ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য খামারীরা যাতে পশু বিক্রয়ের জন্য সঠিক ভাবে পরিবহণ সুবিধা পায় এবং তাঁরা (খামারীরা) যেন হয়রানির স্বীকার না হয়, সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।

তিনি আরও বলেন, জেলার প্রতিটা পশুর হাটে এবার সমাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য, আমারা প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network