১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ইউএনও সোহেল মারুফ হৃদয়ের মণি কোঠায় স্থান করে নিয়েছেন এলাকাবাসীর

আপডেট: মে ১, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া থেকে : বর্তমান চরম সংকটের দিনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার অসহায়, কর্মহীন আতঙ্কগ্রস্থ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আশার বাতিঘর হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহি কর্মককর্তা মোঃ সোহেল মারুফ। উপজেলার গ্রামে-গঞ্জে ছুটে চলেছেন প্রচার বিমুখ, নিরঙ্কার কাজ পাগল এ অফিসার। মনে হয় এযেন তাঁর নিজের গ্রাম।
গোটা পৃথিবীর মানুষ নামের প্রাণিটির বর্তমান সময়টা চরম আতঙ্ক, উৎকন্ঠা ও মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছে, করোনা নামক মরণঘাতি ভাইরাসটির প্রকোপে। পৃথিবীর ধনী-গরীব প্রধানমন্ত্রী থেকে দিনমজুর লড়াই করছে অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এখনও পর্যন্ত বের হয়নি করোনা নামক এই ভাইরাসের প্রতিষেধক। ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ২ লক্ষের বেশি প্রাণ। তবুও থেমে নেই চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ। প্রতিষেধক আবিষ্কারের অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সারা পৃথিবীর মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষও এই মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের থাবায় দিশেহারা। বাইরে বের হলে যেমন, এই রোগের আক্রমন, ঘরে থাকলে না খেয়ে মরার দশা, যেন জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। কি করবে নি¤œ শ্রেণি পেশার মানুষ? এমন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেঁেচ আছে অসহায় মানুষগুলো। সারা পৃথিবীর ন্যায় এই অসহায়ত্ব নিয়ে দিন পার করছেন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক নারী-পুরুষ। তবে এই হতাশাগ্রস্থ মানুষের পাশে প্রথম থেকেই সম্মুখ যোদ্ধার অগ্রনায়ক হিসেবে ভাইরাস আতঙ্ককে উপক্ষো করে সর্বক্ষণ মানুষের পাশে আছেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ।
তিনি বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রির দুর্নীতিমুক্ত বন্টনে সদা তৎপর। প্রতিনিয়ত মানুষের দরজায় সাধ্যমতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন সহযোগিতা। মানুষকে ভালো রাখার প্রচেষ্টা নিরন্তর। কখনও বা স্বল্প মুল্যে পণ্য সরবরাহ করছেন নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি সোহেল মারুফ এর শুভাকাঙ্খীদের অনুদান এবং ভেড়ামারার বিত্তশালীদের কাছে চেয়ে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের অনুদান এবং তাদের অনুদানে উৎসাহিত করে চলেছেন। তাঁকে থামাতে পারেনি এই ভাইরাস নামক দানব। ভাইরাস পরবর্তী সংকট মোকাবেলা করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে চলেছেন। সাধারণ মানুষ না খেয়ে একটি দিনও যেন পার না করে সেই চেষ্টায় অবিরাম কাজ করে চলেছেন। রোদ-ঝড় বৃষ্টি উপক্ষো করেই অনেক গভীর রাত পর্যন্ত খাদ্য সামগিী নিয়ে ছুটে যান অসহায় মানুষের দরজায়। জানা যায়, অনেকে চক্ষু লজ্জার কারনে যেসব মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ত্রাণ নিতে আসতে পারছেন না বা নেন না, তাদের বিষয়ে তিনি প্রথম থেকেই অবগত হয়েছেন। এই লক্ষ্যে তিনি বিশেষ ব্যবস্থা করে তাঁদের বাড়িতে গোপনে খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিচ্ছেন ইউএনও সোহেল মারুফ। এ এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত।
ত্রাণ সহায়তা পেতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের হট লাইনে অথবা ৩৩৩ নাম্বারে অথবা ইউএনও এর নিজস্ব নাম্বারে এসএমএস পাঠিয়ে বা ফোন করলেই বাসায় পৌঁছে যায় খাদ্য সহায়তা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রির ত্রাণ সহায়তা, সাংসদ হাসানুল হক ইনুর ত্রাণ সহায়তাসহ এ পর্যন্ত আনুমানিক সরকারির-বেসরকারিভাবে উপজেলায় প্রায় ২৭,০০০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেছেন। তিনি কোন সময় সরকারি ত্রাণ বা এলাকার বিত্তবান মানুষের কাছে সহযোগিতা নিয়ে অসহায় মানুষের কাছে ছুটে চলেছেন। ইউএনও সোহেল মারুফের এহেন কার্যক্রম দেখে উপজেলার অনেক বিত্তবানরা স্ব-ইচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আগামিতে এই লড়াকু যোদ্ধার পাশে অনেক বিত্তবান দাঁড়াবেন বলে আশ^স্ত করেছেন।
এদিকে পাশের অন্যান্য জেলাগুলো থেকে ধান কাটার শ্রমিক চাহিদা দেওয়ায় তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনবল একত্রিত করে ৫০০ শ্রমিক নাটোর জেলায় প্রেরণ করেন। সেই সাথে তিনি উপজেলার সকল কৃষকগণকে চলমান সামনের মৌসুমের ধান/খাদ্যশস্য ব্যতীত অন্য কিছু চাষ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন এবং উল্লেখ করে বলেন, ইতিমধ্যে কেউ জমিতে পাট রোপন করে থাকলে তিনি যদি রোপনকৃত আবাদ পরিবর্তন করে ধানের আবাদ করতে চান তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ভেড়ামারা পরামর্শ মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে বীজের দামসহ ভর্তুকি দেওয়া হবে। এমন মহৎ উদ্যোগের মধ্যে আগাম খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও তিনি কাজ করে চলেছেন।
এছাড়াও সামাজিক দুরত্ব রাখার পদক্ষেপ হিসেবে উপজেলার প্রায় সবগুলো বাজারকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাঠে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। কয়েকদিন আগে বাজার মনিটরিং করার সময় এক বয়স্ক মানুষ ও তার নাতিকে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে দেখে ইউএনও সোহেল মারুফ কাছে গিয়ে জানতে চান আপনার সমস্যাটি কী? বয়স্ক ব্যক্তিটি জানান, তিনি মুক্তিযোদ্ধা, বাইরে থেকে এসে ভেড়ামারায় আটকে গেছেন, তিনি খুলনা যেতে চান। ইউএনও ক্ষেমিরদিয়াড়ের এক ব্যবসায়ির সহায়তায় তাদের দু’জনের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
এছাড়াও করোনার ভাইরাস এই মরণব্যাধী উপেক্ষা করে দিন-রাত মানুষের পাশে থেকে পুরো উপজেলায় সাড়া জাগিয়েছেন এই কর্মকর্তা। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই খুব সকাল থেকেই পৌরসভার বাজার মনিটরিংসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন। কোন সাহায্যের আবেদন আসলে সেটা যাচাই বাছাই করে গোপনীয়তা রক্ষা করে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেন আবেদনকারীর বাড়িতে। প্রশাসনের ব্যতিক্রমী এই মহতি উদ্যোগ অব্যাহত থাকায় সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিতও হচ্ছেন। #

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network