১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

 

করোনায় মৃত্যু মুফতি আব্দুল্লাহকে গোপনে দাফন, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে

আপডেট: এপ্রিল ১১, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার মৃত্যুর পর মুফতি আব্দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির লাশ গোপনে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিয়ে দাফন করেছে স্বজনরা। হাসপাতাল থেকে ঢাকার বাসা, তারপর মুন্সিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার জানাজা ও দাফনের সময় শত শত মানুষের উপস্থতির খবর জানাজানির পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকায় বেশ কয়েকটি ও মুন্সিগঞ্জে ওই ব্যক্তির গ্রাম লকডাউন করেছে প্রশাসন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা সম্পর্কে তারা জানে না।

পুলিশ জানিয়েছে, মুফতি আব্দুল্লাহ ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদি খানের ইসাপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম শিয়ালদি গ্রামে। সিরাজদিখানের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মুস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসার সাবেক মুহতাতিম (মাদ্রাসা প্রধান) তিনি।

গত বুধবার (৮ এপ্রিল) বুধবার মুফতি আব্দুল্লাহ ঢাকার ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনেরা তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্বজনরা। চিকিৎসকেরা উপসর্গ দেখে ধারণা করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। এরমধ্যে রাতে মুফতি আব্দুল্লাহর পরিবার হাসপাতাল থেকে গোপনে লাশ বের করে গেণ্ডারিয়ায় বাসভবনে নিয়ে যান স্বজনরা। পরে বৃহস্পতিবার সকালে তারা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় নিয়ে জানাজা পড়ে মুফতি আব্দুল্লাহর দফন সম্পন্ন করে। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তিসহ পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ফলে বৃহস্পতিবার জানাজা ও দাফনের সময় অনেক লোকসমাগম ঘটে।

মারা যাওয়া ব্যক্তির এক ভাতিজা বলেন, তার চাচা দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। এতে তারা ভেবেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাই জানাজা ও লাশ দাফনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো নিয়ম মানা হয়নি। কিন্তু পরে জানতে পেরেছেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে থাকার সময় চিকিৎসকেরা ওই ব্যক্তির দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ ছিলেন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামবাসী জানতে পারেন। ফলে জানাজা ও দাফনে অংশ নেওয়া লোকজনসহ গ্রামের সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বলেন, আব্দুল্লাহ গত বুধবার সন্ধ্যা বা রাতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যায়। সেখান থেকে তার পরিবার লাশ গেণ্ডারিয়ায় নিয়ে এসে গোসল করিয়ে কফিনে করে সিরাজদিখানে তার স্থায়ী বাড়িতে নিয়ে আসে। হৃদরোগে মারা গেছেন বলে এলাকায় বলা হয়েছে। যেহেতু স্বাভাবিক মৃত্যু সেহেতু বৃহস্পতিবার সকালে এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা করে দাফন করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। এটা জানার পর তার দাফন কাফনে জড়িত ছিল এমন ৮টি বাড়ি আমরা লকডাউন করেছি।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, প্রথমে ওই মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্তের সন্দেহভাজন ছিলেন। পরিবারের লোকজন বিষয়টি গোপন রেখে লাশ দাফন করেছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে জানা যায়। তাতে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা গিয়েছিলেন, আত্নীয়-স্বজনসহ যারা জানাজাতে ছিলেন তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুনাহার জানান, মুন্সিগঞ্জে তার ভাইয়ের বাসা যেখানে লাশ আনা হয়েছিল, প্রতিবেশীদের বাসা, যারা লাশ দাফন করেছেন,কবরের সামনে যারা ছিলেন তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। দু’টি ওয়ার্ডের ৮টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। লাশের গোসল করানো ব্যক্তিটি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ জানান, মারা যাওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বাড়িগুলো লকডাউন করা হচ্ছে। দাফনের সময় যারা ছিলেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার বলেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।

করোনা আক্রান্তের লাশ লুকিয়ে গোপনে নিয়ে দাফনের বিষয়ে  জানেন না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান। এমনকি করোনা সন্দেহে একজন রোগী মারা যাওয়ার পরও তার লাশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী কেন দাফন হয়নি সে বিষয়েও জানেন না বলে জানান তিনি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network