১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

 

চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যাকাণ্ড: বাবার মদদেই দুই সহোদর রিফাত ও রিশানের বখে যাওয়া

আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সট নিউজ প্রতিবেদকঃ

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম দুই আসামি রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। এই দুই আসামি সম্পর্কে সহোদর। রিফাত ও রিশান ফরাজীর বাবা দুলাল ফরাজী। বাবার প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল ছেলেদের বখাটেপনায়। কাউকে কুপিয়ে জখম অথবা মারধর কিংবা লাঞ্চিতের খবরে শাসন করা দূরে থাক, বরং সন্তানদের হেন অপকর্মে নিজেকে গর্বিত পিতা মনে করতেন তিনি। দুলাল ফরাজী সম্পর্কে এমন তথ্যই দিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

দুলাল ফরাজীর পৈত্রিক বাড়ি সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বরগুনা পৌরসভায় চার নং ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি সড়কে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। সেখানেই পর্যায়ক্রমে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দুই সহোদর রিফাত রিশানের।

বড় ছেলে রিফাত কিশোর বয়স থেকেই বখাটে স্বভাবের। মাধ্যমিকের স্তর অতিক্রমের আগেই লেখাপড়াকে বিদায় জানান। ছোটছেলে রিশান বরগুনা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত।পড়াশোনায় মেধাবী হলেও বড় ভাইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয় রিশান।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে ‘বড় ভাই’ হওয়ার নেশায় পেয়ে বসে দুই ভাইকেই। ‘বড় ভাই’ হওয়ার মিশনে কারণে-অকারণে অথবা তুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়ে এলাকার বড় ছোট হিসেব না করে বিভিন্ন সময়ে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনকে লঞ্চিত করতে থাকে।

রিফাত শরীফ হত্যায় মুল অভিযুক্ত এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাকদব্যবসায়ী নয়ন বন্ডের সাথে রিফাত ফরাজীর সখ্যতা গড়ে ওঠে ২০১৭ সালে। তারা দুইজন যুক্ত হন নয়ন বন্ডের ০০৭ গ্রুপে সহযোগীদের তালিকায়। এলাকায় নতুন কোনো তরুণের আগমন ঘটলে তাকে বাধ্য করা হত গ্রুপের সদস্য হতে। মাদব্যবসায়ী নয়নের সঙ্গে সখ্যতায় যোগ হয় গ্রুপে যোগ হয় নতুন মাত্রা। মাদকের সাথে জড়িয়ে পরে রিফাত। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

গ্রুপ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন সহোদরদের নেতৃত্বে কলেজে ও বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের মোবাইল ও ল্যাপটট জিম্মি করে অর্থ আদায় চলে। আর এসব অপকর্মের নালিশ আসলে বাবা দুলাল ফরাজী প্রথমে স্বীকারই করতেন না। তিনি বলতেন, তার ছেলেরা এমন কর্ম করতেই পারেনা। পরে, প্রমাণ মিললেও সাফাই গাইতেন ছেলেদের পক্ষেই।

শহরের কাঠপট্টি এলাকার বাসিন্দা আজীম মোল্লা জানান, মাস খানেক আগে দীঘিরপাড় এলাকায় তার ছাত্রাবাস থেকে ১৪টি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ কেড়ে নেয় রিফাত বাহিনী। বিষয়টি রিফাতের বাবা দুলাল ফরাজীকে জানালে তিনি অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ চান। সে সময়, প্রমাণ দেয়া হলেও তিনি ছেলেদের পক্ষ অবলম্বন করে নির্লিপ্ত থাকেন। পরে, আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

আজিম বলেন,‘ওদের বাবা দুলালের কারণেই আজ ছেলেদের এই দশা। ছেলেদের শাসন তো দূরে থাক, পক্ষ নিয়ে সাফাই গাইতেন। এমনকি লেলিয়ে দিয়ে অভিযোগকারীদের অপদস্তও করাতেন।

ধানসিঁড়ি সড়কের দক্ষিণ প্রান্তের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুলাল কোনো কাজকর্ম করতেন না। ছেলেদের দিয়ে এসব অপকর্ম করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সেই টাকায় চলত। যে কারণে ছেলেদের ব্যাপারে কেউ নালিশ নিয়ে গেলে উল্টো তাকে ছেলেদের সামনেই ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হত।’ নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দুলালের দুই ছেলের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।’

দুলাল ফরাজী ও তার ছেলেদের সম্পর্কে তাদের বাসার গৃহকর্মী বলেন, ‘ছেলেদের বিরুদ্ধে নালিশ এলে রিফাত ও রিশানকে বকঝকা করতেন তাদের মা রেশমা বেগম। কিন্তু, দুলাল ফরাজী তখন ছেলেদের পক্ষ নিয়ে উল্টো তার স্ত্রীকে মারধর করতেন।’

অভিভাবকদের এমন নৈতিক অবক্ষয় সম্পর্কে বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘পারিবারিক অনুশাসন না থাকলে বেশিরভাগ সন্তানই বখে যেয়ে নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা প্রমাণ করেছে আমাদের নৈতিক অবক্ষয় কতটা নিম্মগামী।’

এ ঘটনায় জড়িতদের অনেক অভিভাবকই ছেলেদের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। ঘটনাটি থেকে সব অভিভাবকের শিক্ষা নেয়া উচিত বলেও মনে করেন জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network