৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

 

টাঙ্গাইলে শেখ রাসেল শিশুপার্কের পরিবর্তে হচ্ছে কাঁচা বাজার

আপডেট: জুলাই ১২, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক,টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল শহরের প্রানকেন্দ্র বটতলায়  শেখ রাসেল শিশুপার্ক  হচ্ছে না। হচ্ছে কাঁচা বাজার।  বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ  পুুত্র শেখ রাসেলের  নামে পার্ক নির্মান না করায় জেলা প্রশাসক বরাাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধারকৃত ৬৬ শতাংশ জমিতে পৌরসভা কাঁচা বাজার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। ওই জমি উদ্ধারের সময় জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র উদ্ধারকৃত জমিতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মানের ঘোষনা দিলেও বর্তমানে পৌরসভা সেখানে রাতারাতি লকডাউনের মধ্যেই কাঁচা বাজার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে ।

ব্যস্ততম সড়কের পাশে বাজার স্থাপন করা হলে সেখানে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হবে। এছাড়া কাঁচা বাজারের কারনে আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। বাজার স্থাপন না করে পার্ক স্থাপনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শহরের আকুরটাকুর পাড়া মৌজায় ৬৬ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত জমি ১৯৭২ সালে তৎকালিন গণপরিষদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাৎসরিক ভাড়ায় ইজারা নেন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভাড়া পরিশোধ করতেন। এক পর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ওই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। মামলায় নিম্ন আদালতে তিনি ডিগ্রী পান। সরকার পক্ষ জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লিপ-টু আপিল করেন। ওই সিভিল ডিভিশন মামলায় সরকার পক্ষে রায় দেন আদালত। পরে লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের পক্ষে রায় দেন।পরে চলতি বছরের  ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে জমিটি উদ্ধার করে। এসময় লতিফ সিদ্দিকীর নির্মান করা স্থাপনাও ভেঙ্গে ফেলা হয়। জেলা প্রশাসন জমিটিতে একটি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পার্কটি বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামানুসারে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ নামকরনের ঘোষনা করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ না নিয়ে জমিটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন । পৌরসভা সেখানে শহরে বটতলা কাঁচা বাজারটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই জায়গায় ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত সেড নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে এর নির্মান কাজ চলছে।

এলাকাবাসী ওই জমিতে বাজার স্থাপন না করে পার্ক নির্মানের দাবি জানিয়েছে। গত ৭ জুলাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্মারনলিপিতে এ দাবি জানানো হয়। এলাকাবাসী জানান, বটতলা বাজারটি রাস্তার উপরে বসে এ জন্য এটি স্থানান্তর প্রয়োজন। কিন্তু সেটি জেলা সদর সড়কের আকুর টাকুর পাড়ায় এই গুরুত্বপূর্ন স্থানে স্থানান্তর করা হলে আরো বেশি অসুবিধার সৃষ্টি হবে। বাজার স্থাপনের নকশা করা হলেও সেখানে কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে বাজারে মালামাল আনা নেয়ার গাড়ি এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের গাড়ি আসলে ব্যস্ততম জেলা সদর সড়ক এবং উত্তর পাশে তালতলা সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকবে। এছাড়াও আবাসিক এলাকায় কাঁচাবাজার হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই বটতলা বাজারটি অন্য কোথাও স্থানান্তর করে এই স্থানে একটি পার্ক নির্মানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকার অধিবাসী সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, বিশিষ্ট আইনজীবী রফিকুল ইসলাম, জেলা বার সমিতির সাবেক সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: আকরাম হোসেন কিছলু জানান, এখানে বাজার স্থাপন হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে, জনভোগান্তি বাড়বে। পক্ষান্তরে পার্ক স্থাপন করা হলে এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ আতাউল গনি সাংবাদিকদের জানান, উদ্ধার করা এই জায়গাটি ফেলে রাখলে আবার দখল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উদ্ধার করার পর সেখানে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ স্থাপন না করে অন্যকোন জনস্বার্থে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এছাড়া অর্পিত ‘ক’ তফসিলভূক্ত সম্পত্তি সরকারি কোন দপ্তরকে স্থায়ীভাবে দেয়ার বিধান নেই।
এদিকে বটতলা বাজারটি রাস্তার উপরে বসে। সেটি স্থানাস্তরের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উদ্ধারকৃত জায়গাটিতে বটতলা বাজার স্থানান্তরের দাবি উঠে বিভিন্ন মহল থেকে। পরে অস্থায়ীভাবে শর্ত সাপেক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভাকে জমিটি বাৎসররিক ভাড়ায় ইজারা দেয়া হয়েছে। সেখানে ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সেড স্থাপন করা হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

সরেজমিন সোমবার (১২ জুলাই) সকালে ওই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম প্রান্তে দোকান নির্মান কাজ চলছে। দোকানের প্রাচীর তিন/চার ফুট করে উঠে গেছে। অন্য প্রান্তে মাটি সমান করনের কাজ চলছে। স্থানীয় অধিবাসি সৈয়দ সাদিকুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের কারনে যখন কঠোর বিধিনিষেধ চলছে তখন পৌর কর্তৃপক্ষ রাতারাতি বাজার নির্মান কাজ করছেন। এলাকাবাসী এখানে বাজার স্থাপন না করে পার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের সে দাবির প্রতি কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক সাংবাদিকদের জানান, শহরের বটতলা বাজারটি রাস্তার উপরে বসে। ওই বাজারটি স্থানান্তরের দাবি দীর্ঘদিনের। জেলা প্রশাসন কর্তৃক উদ্ধার হওয়া জায়গাটি পৌরসভা বাৎসরিক ভাড়ায় ইজারা নিয়েছে। জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিভাবে বটতলা কাঁচা বাজারটি ওই জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেখানে মানসম্মত ও পরিচ্ছন্ন কাঁচা বাজার স্থাপনের কাজ চলছে।
এদিকে রোববার ১১ জুলাই দুপুরে স্থানীয় এলাকাবাসী কাঁচা বাজারের পরিবর্তে পার্ক নির্মানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, আইনজীবী রফিকুল ইসলামসহ অনেকে

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network