আপডেট: জুন ২৪, ২০২০
নেক্সটনিউজ ডেস্ক : বিদেশে অর্থ, মানবপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের নিজের, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান বরাবর গতকাল সোমবার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, এমপি পাপুল, তার স্ত্রী রংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে অনুরোধ করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
একইসঙ্গে চিঠিতে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো স্থগিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত জরুরি ভিত্তিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে দিতেও অনুরোধ করা হয়।
এ ব্যাপারে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য পাপুলের বিষয়ে দুদকে একটা অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে অনুসন্ধান কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিতে পারেন। যা অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ের রুটিন কাজ।’
এদিকে অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির হিসাব জব্দ হচ্ছে। তার এই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা) রয়েছে বলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের বরাত দিয়ে আরব টাইমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। কোম্পানিটির অন্যতম মালিক পাপুলের কুয়েতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার ৫ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। গ্রেফতারের পর দিন থেকেই পাপুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সাংসদ পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদেও সেসব কথাও আসছে।
ইতোমধ্যে পাপুলের মদদদাতা হিসেবে ৭ জনকে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে ২ জন কুয়েতের এবং একজন সাবেক পার্লামেন্ট মেম্বার রয়েছেন। চিহ্নিত সবার নাম দ্রুত প্রকাশ করে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে উঠেছে দেশটিতে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদস সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। ওই আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ভোটের আগ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপি ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পাপুলের পক্ষে কাজ করে। পাপুলি নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাও এমপি হন।