১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

 

কেন মানুষ ওষুধ-অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করছে

আপডেট: জুন ২০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই অনেকে নানা ধরণের ওষুধ সেইসঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার, নেবুলাইজার এমনকি ভেন্টিলেটরের যন্ত্রপাতি কিনে মজুদ করতে শুরু করেছেন।

কোনভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ওষুধটি ফার্মেসিতে নাও পেতে পারেন কিংবা হাসপাতালে সময় মতো অক্সিজেন সেবা পাবেন কিনা এমন আতঙ্ক বা সংশয় থেকেই এই পণ্যগুলো কিনে রাখার কথা জানান সাধারণ মানুষ। খবর বিবিসি বাংলার

হাসপাতালে বেড পাওয়ার আশাই করছেন না

ঢাকার বাসিন্দা তাজনিন নাহার আগে থেকেই তার আশেপাশের ফার্মেসিগুলো থেকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ সেইসঙ্গে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কিনে মজুদ করে রেখেছেন।

করোনাভাইরাস হলে, হাসপাতালে বেড পাবেন সেটা তিনি আশাই করছেন না।

বরং বাড়িতেই যেন প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন, সেই প্রস্তুতি নেয়ার কথাই জানান তিনি।

তাজনিন নাহার বলেন, হাসপাতালে বড় বড় লিংক আছে, এমন মানুষজনও বেড পাচ্ছে না। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেড পাওয়া আরও দূরের বিষয়। আবার ওষুধও খুব দ্রুত স্টকআউট হয়ে যাচ্ছে। এখন বাড়িতেই যেহেতু চিকিৎসা নিতে হবে, তাই আগেই কিছু ওষুধ কিনে রেখেছি। যেন ওষুধ নিয়ে অন্তত চিন্তা করতে না হয়।

সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ডেক্সামেথাসনের সফল ব্যবহারের খবর প্রকাশ হয়।

এরপর মুহূর্তেই বিপুল সংখ্যক মানুষ কোন ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধটি কিনে সংগ্রহ করতে শুরু করেন।

ওষুধটির চাহিদা হঠাৎ এতোটাই বেড়ে যায় যে ঢাকার অনেক ফার্মেসি মূল কোম্পানির কাছে ওষুধটি অর্ডার করেও পাচ্ছে না।

অথচ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে, যেসব রোগীর ভেন্টিলেশন বা অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, সেই সব গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

সেবন বিধি বা মাত্রা না মেনে ওষুধটি ব্যবহার করলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে।

তাছাড়া গবেষকরাও জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস নিরাময়ে এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি।

মূলত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির যেসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়, তার চিকিৎসায় কিছু ওষুধের নাম বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। যার একটি এই ডেক্সামেথাসন।

আবার অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু প্রেসক্রিপশন দেখেই ওষুধ কেনা শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার হোমিওপ্যাথ ওষুধের দিকেও ঝুঁকছেন।

এক কথায় যখন যে ওষুধ আলোচনায় আসছে, সেটা কিনতেই মানুষ বুঝে না বুঝে ভিড় করছে ফার্মেসিগুলোতে।

নিজেরাই নিজেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছি

এসব ওষুধের পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটারের মতো যন্ত্রপাতির বড় ধরণের চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গণমাধ্যমগুলোয় অক্সিজেনের অভাবে কোভিডে-১৯শে আক্রান্ত রোগীদের দুর্ভোগের খবর পেয়ে, আবার যাদের বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তি, অ্যাজমা, হাইপারটেনশন বা হার্টের রোগী আছেন, তারা চেষ্টা করছেন এক সিলিন্ডার অক্সিজেন কিনে রাখতে।

ঢাকার বাসিন্দা ফারহানা হক নিশির এক আত্মীয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা যান।

এমন অবস্থায় পরিবারের আর কারও যেন শেষ মুহূর্তে অক্সিজেনের অভাব না হয়, সেজন্যই প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানান তিনি।

দেশের হাসপাতালগুলোয় যে অব্যবস্থাপনা সেখানে কোন চিকিৎসা পাবো বলে আশা করিনা। ভরসাও নেই। এজন্যই নিজেরাই নিজেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছি।” বলেন মিস হক।

অসংখ্য মানুষ হাহাকার করে অক্সিজেন সিলিন্ডার চাইছে

এদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে থাকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তাদের বিক্রিও এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের সেলস এক্সিকিউটিভ রমজান আহমেদ বলেন, আগে তাদের দিনে যেখানে একটা থেকে দুটো অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হতো, এখন তাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়ে একশর বেশি ফোন আসছে।

বেশিরভাগ সময় তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না।

রমজান আহমেদ বলেন, আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে বিক্রি এতো পরিমাণে বাড়বে, আমাদের ধারণাও ছিল না। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাহাকার করে আমাদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার চাইছে। যতো টাকা হোক তাদের যেন আমরা একটা সিলিন্ডার দেই।

রমজান আহমেদ বলেন, কারও রোগী হয়তো হাসপাতালে অক্সিজেন পাচ্ছেন না। কেউ হয়তো রোগী নিয়ে অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন, ভর্তি করাতে পারছেন না। তখন তারা শেষ উপায় হিসেবে আমাদেরকে ফোন করছেন একটা সিলিন্ডারের জন্য।

পণ্য মজুদের এমন প্রবণতার কারণ কী

সরকারি চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর এক ধরণের আস্থাহীনতা থেকে মানুষ হঠাৎ করে এই পণ্য মজুদ করা শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ।

তিনি জানান, বাংলাদেশে মোট চিকিৎসা সেবার প্রায় ৮০% বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে দেয়া হয়।

কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পুরো চাপটা এসে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোয়।

সরকারি হাসপাতালগুলোর সেই সক্ষমতা না থাকায় মানুষ চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে সংশয় বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

যার ফলস্বরূপ মানুষের মধ্যে এসব পণ্য মজুদ করার এমন প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এজন্য রমজান আহমেদ এটাকে প্যানিক বায়িং বা আতঙ্ক থেকে ক্রয় বলে আখ্যা দিতে চাইছেন না।

তিনি বলেন, হাসপাতালের ওপর মানুষ সেভাবে ভরসা করতে পারছে না। তারা বরং বাসায় চিকিৎসা নিতে চাইছে। জীবন বাঁচানোর চেষ্টা থেকেই মানুষের মধ্যে এই আচরণটা দেখা যাচ্ছে। এটা ঠিক প্যানিক বায়িং নয়। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই মানুষ এটা করছে।

এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

যেন রোগীর সংখ্যা সীমিত থাকে এবং সীমিত সংখ্যক রোগীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে দ্রুত চিকিৎসা সেবার আওতায় আনার ওপরও জোর দিয়েছেন তারা।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network