৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

 

পানি বিপর্যয়ের আশংকা ।। ২০৩০ সালে হারিয়ে যাবে শতভাগ নিম্নাঞ্চল

আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক : উজানে পানি প্রত্যাহার এবং দখল ও দূষণের কারণে দেশের অনেক নদী এখন মৃতপ্রায়। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিঠা পানির নদীবেষ্টিত শহর ঢাকা। এই বিশাল মিঠা পানির জলাধার ইতোমধ্যে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকায়ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উদ্বেগজনক গতিতে নেমে যাচ্ছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে ‘জীবন ও জীবিকার জন্য পানি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র।
পরিজার সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় বৈঠকে এসব বিষয়ে বক্তৃতা করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাক হোসেন। এছাড়া আলোচনা করেন অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, মাহবুল হক, ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌচলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এ দেশে ছোট-বড় ৪০৫টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে অভিন্ন নদী ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমি নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুল্ক বালুচরে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। দখল, ভরাট আর বর্জ্যে অনেক নদী এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন।
তারা বলেন, দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপক হারে কমে গেছে। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যুমনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত। সদরঘাট লঞ্চঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গার পানি বিষাক্ত। এতে যে কোনো জীব বসবাস অনুপযোগী বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ঢাকা চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ এ ধরনের শহর পৃথিবীতে বিরল। অথচ দূষণ, দখল, ভরাটের ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো আজ মৃতপ্রায় এবং এগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অন্যদিকে এ শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ নিুাঞ্চল ইতোমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে পাল্লা দিয়ে চলছে ভরাট কার্যক্রম। ভরাটের এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শতভাগ নিুাঞ্চল হারিয়ে যাবে।
দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকাতেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উদ্বেগজনক গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিবছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে ১৯৭০ সালে ৪৯টি গভীর নলকূপ ছিল। ওয়াসা ১০০টিরও বেশি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে ২৫০০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। নদীর পানি দূষিত হওয়ার অজুহাতে ওয়াসা একের পর এক গভীর নলকূপ বসিয়ে যাচ্ছে। অথচ ওয়াসাকে নদীর পানি দূষণ রোধে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না।
বক্তারা আরও বলেন, ভাটির দেশ হিসাবে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় আমাদের দেশে পানি সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং নৌচলাচল, সেচ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুষ্ক বালুচরে পরিণত হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়তে পারে। নদীতে পানি কমে যাওয়া বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি নির্বিচারে উত্তোলন এবং শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সারনির্ভর ধান চাষের ফলে ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে।
এজন্য প্রকৃতিনির্ভর ধান চাষে গবেষণা জোরদার এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তারা বলেন, উজানে পানি প্রত্যাহার ছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তাঘাট ও সেতু। যমুনা, মেঘনা-গোমতী, কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে উজানে চর পড়ছে, ভাটিতে পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুও একই ধরনের প্রভাব ফেলবে।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানি প্রাপ্তি আরও জটিল হয়ে উঠবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এই মূল্যবান সম্পদকে টেকসইভাবে পরিচালনা করতে হবে। পানি সাশ্রয় করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network