৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

 

শ্রীলংকাকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট: মে ২৬, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক :  এবারই প্রথম বাংলাদেশ সরকার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য শ্রীলংকা সরকারকে ২০ থেকে ২৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বা ঋণ সুবিধা দিচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক উপকরণ সোয়াবের (সাময়িক সময়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ) আওতায় এ ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সরকারকে সোয়াবের আওতায় বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি বন্ডে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু কোনো দেশের সরকারকে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়নি।

যা এবার শ্রীলংকাকে দেওয়া হচ্ছে। শ্রীলংকাও এর আগে বাংলাদেশ থেকে সোয়াবের আওতায় কোনো বিনিয়োগ সুবিধা নেয়নি। তবে তারা ২০১৫ সালে ভারত থেকে সোয়াবের আওতায় সে দেশের রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ সুবিধা নিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ শ্রীলংকাকে রিজার্ভ থেকে সোয়াবের আওতায় বিনিয়োগ বা ঋণ সুবিধা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এখন এটি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আরও আলোচনা হবে। একইসঙ্গে শ্রীলংকার সঙ্গেও আলোচনা হবে। সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মার্চে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময়ে তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাব দেন। এতে তিনি সম্মত হলে পরে শ্রীলংকায় ফিরে গিয়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, শ্রীলংকা সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। বর্তমানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে তাদের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। রিজার্ভকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রাখতে হয়।

এ কারণে তারা ঋণ করে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর হলেও, শ্রীলংকা আমদানি নির্ভর নয়। তাদের আমদানির পরিমাণ কম। এছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও ভালো। যে কারণে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। আর এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। এতে শ্রীলংকার সরকারের শতভাগ গ্যারান্টি রয়েছে।

জানা গেছে, সোয়াবের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগলে এর আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারে। এটি প্রথমে দেওয়া হয় তিন মাসের জন্য। পরে এর মেয়াদ দুপক্ষের সম্মতিতে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

সাধারণত লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। তবে এটি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ২০০১ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়লে দেশের রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। তখন বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। তখন আকুর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম সোয়াব করে।

সে অনুযায়ী আকুর দেনা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা আকু থেকে তিন মাসের জন্য ঋণ নেয়। সুদসহ পরে তা পরিশোধ করে দেওয়া হয়। এরপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর কোনো সোয়াব সুবিধা নেয়নি।আকুর সদস্য দেশগুলো বাকিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। প্রতি দুই মাস পরপর দেনা-পাওনা সমন্বয় করে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যা দিয়ে কমপক্ষে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network