আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২১
নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক : করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সরকারি সংগীত কলেজের সাবেক শিক্ষক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক, গীতিকার ও সুরকার ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন।
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তিনি বলেন, দেশের লোকগানের বিকাশে একুশে পদকপ্রাপ্ত এ গুণী শিল্পীর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বেশ ক’দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আজ সকালে আমাদের ছেড়ে অমৃতলোকে চলে গেলেন। বৌদিও নানা জটিল অসুখে ভুগছেন, বাসায় আছেন, তবে তার করোনা নয়।
এর আগে রাজধানীর মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে ও মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সে সময় করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হন তিনি। এছাড়া তার ফুসফুসেও ইনফেশন ধরা পড়ে।
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী একজন বাংলাদেশি লোকগানের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি ইত্যাদি গান গেয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গেয়ে নিজেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ২০১৮ সালে সঙ্গীত বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন।
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ঢাকার সরকারি সংগীত কলেজে লোকসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদিতে তিনি অনেক গান গেয়েছেন। ১৯৬৭ সালে চেনা অচেনা চলচ্চিত্রের গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে তিনি যেতে পারেননি। পাকিস্তানিরা সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করায় ইন্দ্রমোহন রাজবংশী নিজের নাম পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানিদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন।
পরবর্তীকালে সেখান থেকে চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী গান গাওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করতেন। তিনি এক হাজারেরও বেশি কবির লেখা কয়েক লক্ষ গান সংগ্রহ করেছেন।