আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২০
অমর চাঁদ গুপ্ত, দিনাজপুর থেকে : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের সুজাপুর কামারপাড়ার কাছে আসতেই কানে এসে লাগছে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। কামারশালা হাপড়ের ওঠানামায় বেরিয়ে আসছে বাতাস। সেই বাতাসে কয়লার দগদগে আগুনে পুড়ছে লোহা। পোড়া লোহায় দুই পাশ থেকে দেওয়া হচ্ছে হাতুড়ির আঘাত। তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুড়ি, চাকু, চাপাতি। সাজিয়ে রাখা হচ্ছে দোকানে। প্রয়োজন অনুযায়ী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
দুইদিন পর ঈদুল আজহা। পশু কোরবানী ও মাৎস কাটার জন্য দরকার হবে দা, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ নানা সরঞ্জাম। কর্মকাররা বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলেও বেচাকেনা জমছে না। গত বছরের তুলনায় বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে। মুলত করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে হয়তো কোরবানি দিচ্ছেন না। তাই ঈদে কামারদের ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে।
পৌর শহরের সুজাপুর এলাকায় কামারশালায় গিয়ে দেখা যায়, সুজাপুর সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার মাঠে বসেছে পৌরসভার অস্থায়ী পশুর হাট। পাশেই কামারশালায় ব্যস্ত কামাররা। দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাংস কাটার নানা ধারালো সরঞ্জাম। প্রতিটি কামারশালায় দুই-তিনজন করে কাজ করছেন। নতুন ধারালো সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি পুরাতন সরঞ্জামে শাণ দেওয়ার কাজও করছেন কেউ কেউ।
কামারশালায় প্রতিটি পশু জবাইয়ের ছুরি বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৪৫০-৬৫০ টাকায়। এছাড়াও হাড় কাটার চাপাতি ৪৫০-৭৫০, মাংস কাটার চাপাতি ২৫০-৩০০, বিভিন্ন রকমের চাকু ৫০-২০০, বটি ৩৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিটি পুরোনো ধারালো সরঞ্জাম শান দেওয়া হচ্ছে ৫০-১২০ টাকায়। ইস্পাত ও লোহার তৈরি সরঞ্জাম প্রকারভেদে প্রতিটির দাম ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। স্টিলের তৈরি সরঞ্জামের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
কর্মকার কালীকান্ত রায় বলেন, ‘নদীর ওপারে পৌরসভার পশুর হাট বসেছে। ধারনা করেছিলাম, এবার ব্যবসা ভালো হবে। সে কারণে লোহা ও কয়লা কিনেছি বেশি। কিন্তু এখন বেচাকেনার শেষ সময় হয়ে আসলেও এখনো তেমন ক্রেতার দেখা পাইনি। গত বছর ঈদের আগে দৈনিক বিক্রি হয়েছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার ধারালো সরঞ্জাম। এবারে এখন পর্যন্ত দিনে এক হাজার টাকার ওপরে ব্যবসা করতে পারিনি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের এই কয়েক দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। ঈদের সময় কমবেশি প্রতিটি কামারশালায় এক লাখ টাকারও বেশি আয় হয়।’
২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মকারের কাজ করছে কর্মকার পরিমল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এবারের মতো ব্যবসায় মন্দা দেখিনি। অনেক পাইকার আমাদের কাছ থেকে দা, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারালো সরঞ্জাম কিনে নিয়ে উপজেলা বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করেন। এসব ক্রেতা অনেক আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখতেন। এবার তাদেরও দেখা নেই। তবে ঈদের আগের দিনে কিছু বিক্রি বাড়বে।’