৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

 

উল্লাপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বে-দখল বিক্রির অভিযোগ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সট নিউজ প্রতিবেদক: বেদখল হয়ে গেছে কয়ড়া জঙ্গলখামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের জমি। প্রতিষ্ঠা লঘ্নের ভূমিদাতারা স্কুলে দেওয়া তাদের ৫৮ শতক জমি আবারও অবৈধভাবে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই জমির ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘেœ ভোগদখল করে যাচ্ছেন এই সরকারি সম্পত্তি। ’১৯৭২ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নে কয়ড়া জঙ্গল খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে স্কুলটির নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। স্কুলের জমি বেহাত হয়ে যাওয়ায় নির্মান করা সম্ভব হচ্ছে না নতুন ভবন। আর এতে সমস্যায় ভুগছে শিক্ষার্থী শিক্ষকগণ।

কয়ড়া জঙ্গল খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা খাতুন অভিযোগ করেন, এই স্কুল প্রতিষ্ঠাকালে জঙ্গল খামার গ্রামের কিছুটা খাস জমির পাশে একই গ্রামের বাসিন্দা মোকবুল হোসেন তালুকদার ২৫ শতক এবং জহুরুল ইসলাম ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে লিখে দেন। স্কুলের পক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের নামে এসব জমি রেজিস্ট্রি করে দেন এই দুই দাতা। রেজিস্টার্ড বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্কুলটি  পরিচালিত হতো। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করণের ঘোষনা দেবার পর কথিত দুই ভূমি মালিক তাদের স্কুলে দেওয়া জমি নানা কৌশলে আবার বিক্রি করে দেন। জহুরুল ইসলামের দেওয়া অংশ কিনে নেন কলিমুদ্দিন কালু এবং মোকবুল হোসেন তালুকদারের অংশটি রেওয়াজ বদলের মাধ্যমে কেনেন আব্দুস সামাদ। এরপর থেকে এসব জমির ক্রেতারা স্কুলের সরকারি সম্পত্তি যথারীতি ভোগদখল করে যাচ্ছেন। ১৯৯৪ সালে এই স্কুলের জন্য সরকারের বরাদ্দ দেওয়া একতলা ভবনটি স্কুলে দানকৃত সম্পত্তির পাশের খাস জমিতে নির্মাণ করা হয়।  এই ভবন নির্মানের পর কথিত ক্রেতারা তাদের ভূমি দখল আরো পাকাপোক্ত করেন। এদিকে স্কুলের নিজস্ব জমি বেদখল হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে স্কুলে যাতায়াত করতে পারছে না। পারছে না খেলাধুলা করতে। সেই সাথে জায়গার অভাবে স্কুলের সমাবেশ করাও সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল ভবন সম্প্রসারন করার সুযোগ না থাকায় শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলের বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে। বর্ষা বৃষ্টির দিনে দুভোর্গ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক বৃন্দ। একতলা স্কুল ভবনটিরও এখন জরাজীর্ন অবস্থা। ছাদের পোলেস্তরা খুলে পড়ে প্রায় দিনই আহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি বিগত সময়ে কয়েক দফা সভা ডেকে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে স্কুলের ভূমি দাতা ও ক্রেতাদেরকে জমি ছেড়ে দেবার অনুরোধ জানান। এতে কোন কাজ না হওয়ায় তিনি বিষয়টি সম্পর্কে লিখিতভাবে উল্লাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান।

শিক্ষা কর্মকর্তা কয়েক মাস আগে তাকে এবং কয়ড়া ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সদস্য করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি কীভাবে বিক্রি করা হলো এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে উল্লেখ করেন মর্জিনা খাতুন।

এদিকে উক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দাতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমজি মাহমুদ ইজদানীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কয়ড়া জঙ্গল খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি ও বে-দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদনে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমি দাতাদের জমি বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম অবহিত হয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে গিয়ে স্কুলের জমি বিক্রেতা ও ২য় দফায় ক্রেতাদের ডেকে সম্পত্তি ফেরত দেবার অনুরোধ জানাবেন। তারা কথা না মানলে স্কুলের জমি উদ্ধারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

ডেইলি নেক্সট নিউজ/আবু বকর সিদ্দিক।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network