পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বয়সের ভিত্তিতে দাখিল করা দুই খন্ডের অভিযোগপত্রের প্রথম খন্ডে মিন্নিসহ ১০ জনকে আসামি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রিফাত ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে ১৪ জন কিশোরের নাম। এতে, রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই রিশান ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে। মিন্নির জামিন শুনানির জন্য বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার মূল নথি রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মূল নথি আসার পর বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অভিযোগের উপর শুনানি শেষে আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহন করলে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে সূত্র জানায়।
অভিযোগপত্রের সঙ্গে যা আছেঃ
আদালত সূত্রে জানা যায়, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশের দাখিল করা মূল অভিযোগপত্র দুটি খন্ডে মোট ৩৪ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খন্ড মিন্নিসহ অন্য ৯ জনের বিরুদ্ধে ১৬ পৃষ্ঠার এবং কিশোর অপরাধীদের অভিযোগপত্র ১৮ পৃষ্ঠার। এছাড়াও, আসামিদের ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জমা দেয়া হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশের গ্রহণ করা ৭৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ৫০টির বেশি আলামতের জব্দতালিকা ও বিভিন্ন সময়ে আসামিদের ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল ডিটেইলস অভিযোগপত্রের সঙ্গে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
যেসব আলামত জব্দ করেছে পুলিশঃ
অভিযোগপত্রের সঙ্গে আলামত হিসেবে একটি স্যামসাং ও একটি ধূসর রংয়ের অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, হত্যায় ব্যবহৃত রামদা, বন্ড ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের প্রোফাইল ছবির একটি স্ক্রিনশট, ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাসের ১২ কপি স্ক্রিনশট, বন্ড ০০৭ গ্রুপের ১১ জন সদস্যের প্রোফাইল ছবির ১১টি স্ক্রিনশট, বন্ড ০০৭ গ্রুপের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দেয়া ১১ জন সদস্যের ম্যাসেজের ১১ কপি স্ক্রিনশটের প্রিন্টেড কপি জমা দেয়া হয়েছে।
মামলায় মিন্নির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ও আলামত জমা দেয়া হয়েছেঃ
তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিবার বিকালে, আদালতে ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দাখিল করেছেন এর প্রথম খন্ডের অভিযোগপত্রে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে। এতে, মিন্নির বিরুদ্ধে ‘হত্যার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে রিফাত হত্যার আগে ও পরে মিন্নির সঙ্গে ঘাতক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, অভিযোগপত্রে রিফাতকে নয়ন বন্ডরা কুপিয়ে জখম করার পরও মুঠোফোনে যোগাযোগ ও নয়ন বন্ডের সঙ্গে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নয়ন বন্ডের মায়ের নামে নিবন্ধিত একটি সিম গোপনে মিন্নি ব্যবহার করতো এমন অভিযোগ এনে ওই নম্বরের সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিভিন্ন সময়ের কল লিষ্ট ও কল ডিটেইলস জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এছাড়াও, আলামত হিসেবে নিহত নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ সালোয়ার-কামিজ, আই ভ্রু, মিন্নির ছবি, চিরুণী, চিরুণীতে নারীদের চুল জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রের বিবরণীতে অধিকাংশ জায়গায় মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।
রিফাত শরীফ হত্যার মূল কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে অভিযোগপত্রেঃ
রিফাত শরীফকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে, রিফাতের সঙ্গে বিয়ে পরবর্তী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কে সৃষ্ট বিরোধের জেরেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্নি ও নয়ন বন্ড এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে। বিবরণীতে বলা হয়, প্রথমে মিন্নি নয়নকে বিয়ে করে। বিষয়টি গোপন রেখে ফের রিফাতকে বিয়ে করে মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ ও বাসায় যাতায়াত অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে, রিফাতের সঙ্গে মিন্নির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সবমিলিয়ে, মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে রিফাত শরীফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। আর, এসব অভিযোগে মিন্নির বিরুদ্ধে ১২০-বি(১) ধারায় অপরাধ সংগঠিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভূবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, এ ধারায় কেউ অপরাধ সংগঠিত করলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হলে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাবাস বা দুই বছর বা ততোধিক মেয়াদের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। আদালত অপরাধ বিবেচনায় এর যে কোনো একটি শাস্তি দিতে পারেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি অভিযোগপত্রের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি।
ডেইলি নেক্সট নিউজ/ফয়সাল