আপডেট: জুন ২৯, ২০২০
আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ থেকে : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজেদের টাকা দিয়ে দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গ্রামবাসীরা। ওই উপজেলার একডালা ইউনিয়েনের নিচতালিমপুর গ্রাম থেকে কাঁঠালগাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা দীর্ঘ সময় ধরে অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। আর এই কাঁদা-মাটির রাস্তায় দীর্ঘ ১৬ বছর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ওই দুই গ্রামবাসীর। অবশেষে নিরুপায় হয়ে স্বেচ্ছাশ্রম ও নগদ অর্থ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী।
জানা গেছে, গত ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে ভ্যান চলার মতো করে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ রাস্তাটি নির্মানের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বর্ষার পানিতে রাস্তার মাটি ধুঁয়ে/ক্ষয়ে আবারও জমির সাথে মিশে আইলের মতো হয়ে গেছে। এতে ওই দুই গ্রামবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণে। সবচেয়ে বেশি বিপত্তিতে পড়তে হয় এই এলাকার বিভিন্ন বয়সের রোগী এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও গ্রামের বিভিন্ন কৃষিপণ্য যেমন- ধান, চাল, পাট, শাক-সবজিসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনে দুই কিলোমিটার রাস্তা পারে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের।
নিচ-তালিমপুর গ্রামটি রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রাম। তাঁরাও চলাচল করেন এই কাঁদা-মাটির রাস্তায়। ওই দুই গ্রামের চলাচলের ভরসা ওই কাঁদা-মাটির রাস্তা।
ওই দুই গ্রামে প্রায় ৭শ’ পরিবাসের বসবাস। তাঁরা মাঠের মধ্য দিয়ে জমির আইলের মতো ওই সরু রাস্তা দিয়ে আবাদপুকুর-বগুড়া সড়কের কাঁঠালগাড়ী নামকস্থানে পৌঁছাতে পারেন। গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ওই সরু রাস্তায় চলাচল করলেও রাস্তাটি পুরোপুরি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় মেম্বার বা চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ করতে পারেনি।
রাস্তা তৈরির জন্য ওই দুই গ্রামের ভিক্ষুক থেকে শুরু করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, ধনী-গরীব মিলে ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে সার্মথ্য অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিজেরায় চাঁদা তোলেন। গত কয়েকদিন আগে একটি স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কাটার পাশাপাশি গ্রামের লোকজন মিলে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন।
ওই দুই গ্রামের জিল্লুর রহমান, ছামসুজ্জামান, আমানুর রহমান স্বপন, মিজানুর রহমানসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কাঁদা আর পানি পাড় হয়ে কেটে গেল আমাদের জীবন। কিন্তু এই গ্রামের ভোগান্তি নিরসনে কেউ এগিয়ে এলোনা।
এ ব্যাপারে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম জানান, গত চার বছর আগে রাস্তাটির কিছুটা কাজ করা হয়েছে। পরে চারবার প্রকল্প আকারে দিয়েও রাস্তার কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইদুর রহমান মিয়া বলেন, গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণ, পাকাকরণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রকল্প আকারে দিতে হয়। যেহেতু গ্রামবাসী মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন সেহেতু রাস্তার কাজ একধাপ এগিয়ে রইল। পাকাকরণের জন্য প্রকল্প আকারে দিলে অবশ্যই তা নির্মাণ বা পাকাকরণ করা হবে।
গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের কাজকে স্বাগত জানিয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা নির্মাণ বা পাকাকরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।