৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

 

প্রতিবন্ধী বিপ্লবের ভাইয়ের আকুতি : “মেয়র মিরন কাক্কুকে বইলেন,আমগো জানি আরেকটু সাহায্য করে।”

আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক ,টাঙ্গাইল :টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জামিলুর রহমান মিরনের হাত থেকে ত্রান নিয়ে মহাখুশি প্রতিবন্ধী বিপ্লব ও তার ভাই কাওসার। মহামারী করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে পড়া সাত সদস্যের পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে। ক্লিন টাঙ্গাইলের ত্রান নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাই বিপ্লবকে হুইল চেয়ারে করে বাড়ি ফেরার পথে  নেক্সটনিউজের কাছে কাওসার হোসেন আকুতি জানায়, “মেয়র মিরন কাক্কুকে বইলেন, আমগো জানি আরেকটু সাহায্য করে। “

 বিপ্লব মিয়া।বয়স আঠার।প্রতিবন্ধী হয়েই জন্মেছে সে।পাঁচ ভাইয়ের মধো সবার বড় বিপ্লব পরিবারের জন্য বোঝা হলেও পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে অসন্তুষ্ট নন।পিতা মো.মনির হোসেন রিক্সা চালান।মা বকুল বেগম কাজের ভুয়ার কাজ করেন।ছাত্রদের ম্যাচে রান্নার কাজ করে পরিবারকে সহযোগীতা করেন তিনি।বিপ্লবের ছোট ভাই কাওছার হোসেনের বয়স ১৩ বছর।সে তার চাচা মোশারফের সাথে ঢাকার বরবোতে টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে।নাসির উদ্দিন (১০) জেলার ঘাটাইল উপজেলার একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।পাঁচ বছর বয়সী আলামীনকে এখনো স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি পরিবার।সবার ছোট হাসানের বয়স তিন বছর। বিপ্লবের পরিবার থাকে টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদি টাঙ্গাইলের মাঝি পাড়া।ঐ পাড়ার ইলিয়াস নেতার বাসায় ভাড়া থাকে তারা।

বাবা মনির রিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তাতে সাত সদস্যের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। কারন রিক্সার মালিককে দৈনিক জমা দিতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করতে লাগে ৮০ টাকা।তাতে সকল খরচ বাদ দিলে গড়ে দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করতে পারে।তাই বিপ্লবের মা বকুল বেগমও কাজের ভুয়ার কাজ নেয়।শহরের ছাত্রদের দুইটি ম্যাচে রান্নার কাজ করে মাসে ১৫০০ টাকা পান তিনি। তাতেও যখন সংসার চলছিলো না তখন ১৩ বছরের সুন্দর চেহারার ফুটটফুটে কাওসারকে চাচার সাথে ঢাকায় পাঠানো হয় চাকরির জন্য। কাওসারের টেক্সটাইল মিলে চাকরি হওয়ায় কোনোরকমে চলে যাচ্ছিলো তাদের সংসার।
কিন্তু প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর কারনে লকডাউনে রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা।টাঙ্গাইল জেলা দেশের প্রথম লকডাউন ঘোষিত জেলা হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ রিক্সা চালানো বন্ধ রয়েছে মনির হোসেনের।ছাত্ররা বাড়ি চলে যাওয়ায় ম্যাচও বন্ধ। তাই বিপ্লবের মা বকুল বেগমও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।বিপ্লবের ছোট ভাই মো. কাওসারও করোনার কারনে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে বাবা-মায়ের কাছে চলে এসেছে। এমতাবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারটি মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
 
২৪ এপ্রিল নেক্সটনিউজ এর সম্পাদকের সাথে কথা হয় প্রতিবন্ধী বিপ্লব ও তার ভাই মো.কাওসার হোসেনের সাথে। কাওসার হোসেন তার বড় ভাই প্রতিবন্ধী বিপ্লবকে নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের বেবীস্ট্যান্ডের সারগুদামে এসেছিলো ত্রান নেয়ার জন্য। ক্লীন টাঙ্গাইল নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী স্থানীয় সংগঠন এই ত্রান কার্যক্রমের আয়োজন করে।কাওসার ত্রান নিয়ে হুইল চেয়ারে করে তার ভাইকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলো। নেক্সটনিউজের কাছে কাওসার হোসেন তার পরিবারের দুঃখের কথা জানায়।প্রতিবন্ধী বিপ্লব স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না। হাঁটতেও পারেনা।হুইল চেয়ারে চলাচল করে সে।আদো আদো কথা বলতে পারে ।তোমাকে কে ত্রান দিছে- জিজ্ঞেস করলে বিপ্লব হাসিমাখা মুখে বলে, ” মিরন কাক্কু,মিরন কাক্কু দিছে। ” আলহাজ্ব জামিলুর রহমান মিরন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র।সেই মেয়রের হাত থেকেই ত্রান নিয়েছে বিপ্লব। ত্রান পেয়ে সে মহাখুশি। বিপ্লবকে নিয়ে আসা তার ভাই কাওসার হোসেন নেক্সটনিউজকে জানায়, মেয়র মিরন কাক্কুর হাত থেকে ত্রান পেয়ে খুব খুশি হয়েছি।আমাদের তো আর দেখার কেউ নেই। কাওসার হোসেন এক পর্যায়ে বলে, ” স্যার, মেয়র কাক্কুকে বইলেন।আমগো জানি আরেকটু সাহায্য করে।” প্রতিবন্ধী বিপ্লবের ছোট ভাই কাওসারের পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু পরিবারের অবস্থা চিন্তা করে তাকে এই ছোট বয়সে চাকরির পথ বেছে নিতে হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সের আলামীনকেও স্কুলে ভর্তি করানো দরকার।কিন্ত অর্থনৈতিক অভাব থাকায় তাকে পড়াশোনা করাতে পারছে না। সে জানায়, তার বড় ভাই প্রতিবন্ধী হলেও তার প্রতি পরম ভালোবাসা রয়েছে আমাদের পরিবারের সকলের ।অভাবের কারনে বড় ভাইকে চিকিৎসা করাতে না পারায় কষ্ট হয় । কাওসার জানায়, অভাবের তাড়নায় বাবা রিক্সা নিয়ে একদিন বেরুলে পুলিশ বাবাকে পিটিয়ে আহত করেছে।তাই আর বেরোয় না।একদিকে পুলিশের ভয় আরেক দিকে পেটের ক্ষুধা।কোনদিকে যাবো আমরা — প্রশ্ন কাওসারের। সাত সদস্যের এই পরিবারটির জন্য বিত্তশালী, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে জনদরদী টাঙ্গাইলের পৌর মেয়র আলহাজ্ব জামিলুর রহমান মিরনকে এই পরিবারটির দিকে বিশেষ সুদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network