১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

 

বরিশালের এমপি টিপুর পিয়নের টাকার পাহাড়

আপডেট: আগস্ট ২, ২০২৪

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক,বরিশাল : প্রধানমন্ত্রীর পিয়নের পরে আরেক পিয়নের সন্ধান মিলেছে। বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য,   বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া টিপুর পিয়ন ইমরানের ঢাকায় ফ্লাট, গাড়ী এবং ব্যাংকে কোটি টাকার খবর পাওয়া গেছে। এমপির এপিএস পরিচয়ে বিভিন্ন লোককে গভীর নলকূপ, টিআর, কাবিখা, কাবিটা দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের চরউত্তর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের নেছার হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপুর ঢাকা অফিসের পিয়ন হিসেবে কাজ করছেন। ইমরানের বিরুদ্ধে এমপির প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ঘর নিয়ে গরুর ঘর (গোয়াল ) বানানো, রাস্তার ষ্ট্রিট লাইট গোয়াল ঘরের পাশে স্থাপন, নিজের পরিবারের লোকজনের নামে সরকারি বরাদ্দ নেওয়া, কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, কৃষি অফিসের মাড়াই যন্ত্র-পাওয়ার টিলার নেওয়াসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ইমরান গরিবের দেওয়া সরকারি ঘর নিয়ে নিজের গরু ঘর বানিয়েছেন। রাস্তায় স্থাপনের জন্য বরাদ্দকৃত  ষ্ট্রিট লাইট তিনি নিজের গোয়াল ঘরের পাশে স্থাপন করেছেন। বিগত সংসদের আমলে মুলাদী-বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে কয়েক শত লোককে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে ২৫ হাজার করে টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০২৪ সালে কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের আওতায় বিগত ১৪ মার্চ ইমরানের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরহোগলপাতিয়া তাদের কবর স্থানে মাটি ভরাট দেখিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন। আবার গত ১৮ মে ওই একই প্রকল্পের জন্য কাবিখা বরাদ্দ নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। কিন্তু ওই প্রকল্পের কোনো কাজ না করে তিনি সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ইমরান এমপির অফিসের পিয়নের চাকুরি করেই ঢাকায় কোটি টাকার বেশি দামে ফ্লাট কিনেছেন। কিনেছেন গাড়ী এবং ব্যাংকেও রয়েছে  কোটি টাকা। এমপির এপিএস পরিচয়ে এক ডাক্তারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন ইমরান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, ইমরান বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে দালাল নিয়োগ করেছেন। ওই দালালের মাধ্যমে তিনি মানুষকে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, নলকূপ দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছেন। উপজেলায় বরাদ্দের তালিকায় তার সুপারিশ প্রাপ্তদের বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি থাকে। আর দালালদের মাধ্যমে তিনি টাকা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল তারিখে এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপুর একটি ডিও লেটারে দেখা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলায় গরিবদের দেওয়ার জন্য ঐচ্ছিক তহবিলের ৭৫ হাজার টাকার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় এমপির পিয়ন ইমরানের মা, বাবা, ভাই ও ভাগিনার নামে ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া গত ৬ মে এবং ২৬ মে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর এমপির ২টি ডিও লেটারে ৫০ বান টিন বরাদ্দের আবেদন রয়েছে। ওই টিনের মধ্যে ইমরানের মা, বাবা, ভাই, ভাগিনা ও বোনের নামেই রয়েছে ১৮ বান টিন বরাদ্দের নাম। এছাড়া কৃষি অফিসের মাড়াই মেশিন, পাম্প, ট্রাক্টর বরাদ্দের একটি বড় অংশ নিয়ে যান এমপির পিয়ন ইমরান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবুগঞ্জ উপজেলার এক সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এমপি সৎ মানুষ , কিন্তু তার অফিসের পিয়ন ইমরান এমপির নাম করে প্রায়ই ফোন দিয়ে সুপারিশ করেন। তার বাবা, ভাইয়ের নামে বরাদ্দকৃত টিআর কাবিখার কাজ না করেই বিল নিতে আসেন। না দিতে চাইলে এমপি মহোদয়ের ভয় দেখান ইমরান।
ইমরানের বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “আমার বাবা মারা গেছেন। ইমরানের বিষয়ে পরে কথা বলবো।” গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপির এপিএস ফয়জুল ইসলাম বলেন,”আমি নতুন যোগদান করেছি।আমি ইমরানের সম্পর্কে কিছু বলতে পারবোনা।”
এ ব্যাপারে ইমরান হোসেন নিজেকে এপিএস দাবি করে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গভীর নলকূপ, টিআর, কাবিখা, কাবিটা দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।”

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network