আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ থেকে: জীবনযুদ্ধে কেউ থেমে নেই। বেঁচে থাকার জন্য সবারই চাই খাদ্য। আর তাই জীবিকার তাগিদে সবাইকে কাজ করতে হয়। অনেকেই বাপ-দাদার পেশাকে পাশ কাটিয়ে অন্য পেশায় নিজেকে মানিয়ে নেন। আবার কেউবা তাঁদের পূর্ব-পুরুষের পেশাকেই আঁকড়ে ধরে জীবন কাটিয়ে দেয়।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আদিবাসী (খ্রিষ্টান) সম্প্রদায়ের লোকজন জীবিকার আহরণে বেছে নিয়েছেন বাঁশ ও বেতের তৈরী পণ্য উৎপাদনকে। বিভিন্ন সাংসারিক পণ্য তৈরি করে তা বাজারে বেচে চলছে সংসার। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বাঁশ ও বেত দিয়ে এই পল্লীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারিগররা তাঁদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন সাংসারিক ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বিশেষকরে গৃহস্থ্য বাড়ীতে এসব পণ্যে দেখা মেলে। তাঁদের বানানো বিভিন্ন জিনিষপত্রের মধ্যে রয়েছে-কুলা, ডালা, খৈচালা, মাছ শিকারের খলই ও ঝাড়ুসহ প্রভৃতি হস্তশিল্পরা আমাদের প্রদান করে থাকেন। বিনিময়ে কিঞ্চিৎ অর্থ পেয়েই তারা খুশি।
সমাজে মাহালী সম্প্রদায় নামে পরিচিত এসব লোকজন সাধারণত বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন দরকারী জিনিষপত্র। তবে, এসব পণ্যের এখন আর তেমন কদর নেই। বলা চলে, ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের লোকজনরা সাংসারিক কাজে, কৃষি কাজে ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও, এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। আগে বাসা-বাড়িসহ, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার হত বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র।
এখন অল্প দামে হাতের কাছে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় এই কুটির শিল্পের তৈরী বিভিন্ন আসবাবপত্রের চাহিদা আর তেমন নেই। এছাড়াও, এই শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত পাওয়া দুষ্প্রাপ্য বিষয় হয়ে পড়েছে।
তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও পূজা-পার্বণ মেলাতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলই, ধামা, টোনা, পাল্টা, মোড়া, দোলনা, বুক সেলফ কদাচিৎ চোখে পড়ে।
দক্ষিণ চকযদু মাহালী পাড়া গ্রামের আলব্রিকুশ মারান্ডি ও তার স্ত্রী মিলিনা হেমব্রম বলেন, ‘জীবন চালাতে এখনও বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া এই শিল্পকে হারিয়ে যেতে দিইনি। এমন দুর্দিনেও এই পল্লীর কিছু পরিবার বাঁশ-বেত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবন নির্বাহ করছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্ব পুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তাঁরা।’
এই দম্পতি আরও বলেন, ‘ক্রেতাদের চাহিদা বা অর্ডার অনুযায়ী এখন তাঁরা পণ্য তৈরী করে। শ্রম ও কাঁচামালের দামের উপর নির্ভর করে বেচা-কেনা করেন তাঁরা। ‘
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গণপতি রায় বলেন, এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় স্বল্পসূদে ঋণ বা সরকারী প্রণোদনা। সরকার সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আদিবাসী বা মাহালী সম্প্রদায়কে সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত করেছেন। এসব ভাগ্যহীন, অসহায় লোকদের আবেদন পেলে সরকার তাঁদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণদানসহ সকল সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।