নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে করে চরম হুমকির মুখে পড়ছে শহরের বিভিন্ন রক্ষা বাঁধ। এদিকে এই বাঁধ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু লোক দেখানো দায়সারা কাজ করে কোটি কোটি টাকা বিল তৈরি করছেন। আর টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে সেই ভুতুরে বিল তুলে নিচ্ছেন এ কাছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজ করায় রক্ষা হয়নি এলানজানি নদীর বাঁধ। বুধবার ভোরে সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নওগা এলাকার এলানজানি নদীর সেই বাঁধটি ভেঙ্গে ওই এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ও বল্লা ইউনিয়ন এবং বাসাইল উপজেলার ফুলকি ও কাশিল ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে তারা বাঁধ রক্ষার্থে আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছে।
অপরদিকে গত বন্যার কারণে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং বাঁধের প্রায় অর্ধেক ভেঙে যায়। সে সময় স্থানীয় এলাকাবাসী বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর তারা জানিয়েছিলেন পানি শুকিয়ে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি মেরামতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ কারনে চলতি বন্যায় গত ২৩ জুলাই সদর উপজেলার শিবপুর পাছ বেথর এলাকায় পুংলী নদীর পাশে শহর রক্ষা এই বাঁধের ২৫০ মিটার ভেঙে যায়। এতে করে হুমকির মুখে পরে স্থানীয় এলাকাবাসী। আর এই ভাঙন ঠেকাতে আপতকালীন ব্যবস্থা গ্রহন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের দাবি ২৫০ মিটার ভাঙন এলাকায় সাড়ে ১৩ হাজার বালির বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হচ্ছে। আর এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এ ভাঙন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত (২৯ জুলাই) তিন থেকে চার হাজার বালির বস্তা ফেলেছে। এতে করে কোন বাঁধ রক্ষায় কোন লাভ হবে না বলে মনে করছেন তারা। পাছবেথর এলাকার আলী আজম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৫ জুলাই কোন কোন স্থানে ১০০ টি বস্তা আবার কোন স্থানে ১০২টি বালির বস্তা ফেলেছে। এভাবে প্রতিদিন পাঁচটি স্থানে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। একই এলাকার আব্দুর রহিম জানান, প্রতিদিন তারা গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ বালির বস্তা ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারা বলছে (পানি উন্নয়ন বোর্ড) এ পর্যন্ত তারা ১০ থেকে ১২ হাজার বালির বস্তা ফেলেছে। আসলে কতগুলো বালির বস্তা ফেলেছে তা এখন পানির নিচে গিয়ে গুনতে ইচ্ছে করছে জোক করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ কবিরুজ্জামান ডল জানান, বন্যার শুরু থেকে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার জানালেও তারা কোন প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গত কয়েকদিন যাবত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু বালির বস্তা ফেললেও তা পানির স্রোতে ভেসে যায়। পরে বুধবার ভোরে বাঁধ ভেঙ্গে ওই এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ও বল্লা ইউনিয়ন এবং বাসাইল উপজেলার ফুলকি ও কাশিল ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ঘারিন্দা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আ. বারেক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতিতে প্রায় দুইশ ফুট বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে। আস্তে আস্তে ভাঙ্গার পরিধিও বাড়ছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আনছারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় মতো কাজ করলে বাঁধটি রক্ষা করা যেতো। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ভাঙ্গা বাঁধের বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। ওই বাঁধে গত চার পাঁচদিন যাবত কাজ চলমান ছিলো। গত রাতেও ১১ টা পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে। পরে বুধবার ভোরে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নেক্সটনিউজ/জেআলম