সুযোগসন্ধানীরা সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে পারবে না : মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
আপডেট: জুলাই ৫, ২০২০
ফেইসবুক শেয়ার করুন
সুযোগসন্ধানীরা সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে পারবে না : মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
আপডেট:
সুযোগসন্ধানীরা সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে পারবে না : মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
♦ করোনাকালীন সময়ে গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে সরকার এবং মালিকপক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারি প্রণোদনা অথবা ঋণ দেয়ার পাশাপাশি মালিকপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মালিকদের সদিচ্ছ্বাও থাকতে হবে। এই সংকটময় মুহুর্তে কোনো কর্মী ছাঁটাই করা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলেও মনে করেন আলোচকরা। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
মঙ্গলবার আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী এবং বিএফউউজে’র মহাসচিব শাবান মাহমুদ। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের সাংবাদিকদের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু করোনা এমন একটি অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। এই করোনার সময় পত্রিকা বিতরণ অনেক জেলাতেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমি যে বাড়িতে থাকি সেখানে ১২০ টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ২ টা পরিবারেই পত্রিকা নেয়া হচ্ছে। নতুন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সারা পৃথিবী যেখানে সংকটে পরেছে সেখানে বাংলাদেশও সংকটের বাইরে নয়। এই সংকটেও সাংবাদিকরা কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছে। টেলিভিশনে আগে যেখানে নিউজ রুমে ৪০ জন কাজ করতেন, সেখানে এখন ৮ জন কাজ করছে।’
‘মালিকদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, এত অল্প লোক দিয়ে কাজ করা গেলে বেশি লোকের দরকার কি? এই করোনা সংকটের কারণে সাংবাদিক সংগঠনের উদ্যোগে সরকারের কাছ থেকে অনেক বেশি না হলেও প্রণোদনা আদায় করেছে। আমরা এই সময়ে জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে লড়াই করছি, পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নিউজ করায় আমাদের ২১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে যদি আমাদের আইনি লড়াইও করতে হয়, তাহলে এটা আমাদের জন্য বেদনার।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক ইউনিয়ন করি, তাদেরকে মালিকপক্ষের লোক ভাবা হয়। এটা আসলে ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা যখন বেতন বৃদ্ধির জন্য ওয়েজবোর্ড আদায় করি, একই সঙ্গে মালিকপক্ষের জন্য বিজ্ঞাপন হার বৃদ্ধির জন্য কাজ করি। আমাদের দেশে প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওয়েজবোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছি। কিন্তু টেলিভিশন সাংবাদিকদের জন্য কোনো ওয়েজবোর্ড নেই। তাই এখনো সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পাওয়ায় সাংবাদিকদের চাকরি চলে কিছুই করার থাকে না। আমি মনে করি, সাংবাদিকতা অযোগ্য লোকদের পেশায় পরিণত হয়েছে। মেধাবী অনেকেই সাংবাদিকরাই এসেছিলেন, তারা কেউই এখন সাংবাদিকতায় নেই। আমরা যদি মেধাবীদের সাংবাদিকতায় আনতে চাই, তাহলে তাদের চাকরির আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। আগামী দিনের সাংবাদিকদের জন্য অযোগ্যদের কোনো জায়গা নেই। যারা কোনো বিশেষ সুবিধায় সাংবাদিকতায় এসেছিলেন, তাদের পক্ষে টিকে থাকা কষ্ট হবে। মেধাবী সাংবাদিকদের ধরে রাখতে মালিকপক্ষেরও উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া সরকার মালিকদেরও ঋণ সুবিধা দিতে পারে। ফলে মালিকপক্ষ তার প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখবেন, কোনো কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাববেন না।’
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আরো বলেন, এই করোনাকালে যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠপর্যায়ের খোঁজ নিয়েছেন। তিনি কোনো কানকথা না শুনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একজন আয়া থেকে জেলাপ্রশাসকের সাথে কথা বলছিলেন। করোনা মোকাবিলায় আগে যেখানে ১ টি টেস্ট কেন্দ্র ছিল, সেখানে ৬৮ টি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির ওপর জোর দিয়েছেন। বছর শেষে ২৫ শতাংশ খাদ্য উদ্ধৃত্ত থাকার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে নিয়ে যে প্রচারণা চালানো হয়েছিল, তা থেকেই বোঝা যায় একটা শ্রেণী দেশ ও বিদেশ থেকে এসব প্রচার করছে। একজন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকও মিথ্যা সংবাদ নিয়ে যে ভাষায় কথা বলছেন, তা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। লন্ডন ও নিউইয়র্ক থেকে এ ধরণের প্রচারণা বেশি চলছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিভ্রান্তি রোধ করার কাজ করছে। এই করোনায় আক্রান্ত ৮০-৮৫ শতাংশ রোগীই বাড়িতে বসে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। বাকিরা হাসপাতালে গিয়েও অধিকাংশই সুস্থ হচ্ছেন।