আপডেট: জুন ১৩, ২০২৫
নেক্সটনিউজ প্রতিবেদক, (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে টিউবওয়েলের পানি পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারপিট ও গ্রাম্য সালিশে হামলার ঘটনা ঘটেছে।পরপর মারপিটের ঘটনায় মামলা করতে যাওয়ায় বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে থানা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূঞাপুর থানার এসআই মো. সুমনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার(১২ জুন) বিষয়টির প্রতিকার ও এসআই সুমনের শাস্তির দাবিতে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মোছা. লাকি আক্তার। তিনি ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের কাগমারীপাড়া গ্রামের রনি হাওলাদারের স্ত্রী।
জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের কাগমারীপাড়া গ্রামে জমিতে বাড়ির টিউবওয়েলের পানি পড়াকে কেন্দ্র করে গত ৯ জুন স্থানীয় মৃত শহিদুলের ছেলে মো. রাব্বীর সঙ্গে জমির মালিক আকতার হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়।
এর জের ধরে ঐদিন আকতার হোসেনের ভাই-ভাতিজা সহ ১০-১২জন উশৃঙ্খল লোক বাড়িতে ঢুকে মো. রাব্বী(২০) ও তার মা লাভলীকে(৪০) বেদম মারপিট করে। ওই সময় তারা লাভলীর পড়নের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং তার গলায় থাকা ৭ আনি ওজনের স্বর্ণের চেইন লুট করে নিয়ে যায়।
পরে বিষয়টি মীমাংসা করতে গত ১০ জুন সন্ধ্যায় স্থানীয় লিপি ভূঞার বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে এলাকার হিতৈষী মাতব্বররা উপস্থিত ছিলেন।
সালিশের প্রায় শেষ দিকে আকতার হোসেনের নির্দেশে তার ছেলে মো. আসিফ(২২), নুরু ভূঞার ছেলে মিয়াত ভূঞা(২২) সহ ২০/২৫ জন সহযোগী নিয়ে মাতাব্বরদের উপস্থিতিতে অতর্কিতভাবে লাভলী, শিল্পী, লিমন, রাব্বী, হাসমত, আলমগীর ও জাহাঙ্গীরদেরকে বাড়ির গেট আটকে দিয়ে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট করে।
সেখানে উপস্থিত থাকায় মোছা. লাকি আক্তারকে মারপিট করে গলা থেকে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন এবং ভ্যানিটিব্যাগে থাকা তিন হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগে বলা হয়।এ সময় উপস্থিত মাতব্বররা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন তাদের সবাইকে লিপি ভূঞা তার ঘরে আশ্রয় দেন।
পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, লিপি ভূঞার ঘরে আশ্রয়ে থাকাবস্থায় মোছা. লাকি আক্তার সেখানে উপস্থিত সালামের স্ত্রী লিপি বেগমের ০১৯৮৪-২৭০০৪৫ নম্বরের মোবাইল ফোন থেকে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান।
পরে থানা থেকে এসআই সুমনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসআই সুমন অভিযুক্ত আকতার হোসেন তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত আক্তারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে আশ্রয়ে থাকা আহতদের সহযোগিতা না করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আকতার হোসেনকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত জনতার চাপে এসআই সুমন বাধ্য হয়ে উভয়পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, ঐ ঘটনার পর গত ১১ জুন(বুধবার) সকাল ১০টার দিকে উল্লেখিতরা তাদের বাড়িতে গিয়ে পুনরায় রাব্বী ও তার মা লাভলীকে মারপিট করে এবং চাল কেনার জন্য রাখা ১৬০০ টাকা লুট করে নেয়। এমতাবস্থায় মোছা. লাকি আক্তার ,আহত রাব্বী ও লাভলীকে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পরে ঐদিনই ১২টার দিকে রাব্বীর মা লাভলী ভূঞাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে এসআই সুমন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ঐ সময় তারা থানার অফিসার ইনচার্জের(ওসি) সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও এসআই মো. সুমন জবরদস্তি করে তাদেরকে থানা থেকে তাড়িয়ে দেন।
পরে তারা হাসপাতালে ফিরে দেখতে পান, হাসপাতালে ভর্তি রাব্বীর অবস্থার অবনতি হয়েছে। এমতাবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাব্বীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। বর্তমানে রাব্বী টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগকারী মোছা. লাকি আক্তার জানান, তিনি ও লাভলী মামলা দায়ের করতে যাওয়ায় থানার এসআই মো. সুমন তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তারা ওসি’র সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে এক প্রকার গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দিয়েছেন।
এজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য অভিযোগের কপি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপি’র কাছেও দিয়েছেন।
অভিযোগকারী লাকী আক্তার এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ” আমি এস আই সুমনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
এ বিষয়ে এসআই মো. সুমন জানান, ৯৯৯ এ ফোনের পর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আশ্রিতদের উদ্ধার করেন এবং উভয়পক্ষকে যার যার বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছে দেন। এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ১১ জুন তারা থানায় এসে আবার মামলা দায়ের করতে চাওয়ায় তিনি তাদেরকে বলেছেন একটি ঘটনায় দুবার মামলা করার প্রয়োজন নেই। তারপরও তিনি তাদেরকে ডিউটি অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে থানা থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার তার নেই- তিনি তা করেন নি। তবে ঐদিন সকালে আবার মারপিটের ঘটনা ঘটেছে কী-না তা তিনি জানেন না।
ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, ৯৯৯ এ কল দেওয়ার পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। সালিশি বৈঠকে দুইপক্ষের মধ্যে মারামারী হওয়ায় উভয়পক্ষকে অভিযোগ দিতে বলেছেন।
তাছাড়া এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ নেওয়া হয়েছে- সেটা এসআই মো. সুমন তদন্ত করছেন।
তার পক্ষে এ ধরনের অন্যায্য কাজ করার কথা সঠিক নয়। তাছাড়া যে পক্ষ অভিযোগ করেছে- মূলত ঐ পরিবারটিই ভালো নয় বলে ওসি সাংবাদিকদের জানান।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, “অন্যায় করে কেউ পার পাবেনা। অভিযোগের কপিটা এখনও তিনি দেখেন নাই। কপিটা দেখে যথাযথ তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”